সেন্ট মার্টিনে প্রবালের সৌন্দর্য উপভোগে সিজনের প্রায় প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক পর্যটক ভিড় করেন ছেঁড়াদ্বীপে। কাগজে কলমে এই দ্বীপে যাওয়া বারণ হলেও তা মানেন না কেউ। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সেন্ট মার্টিনে আসার পর ছেঁড়াদ্বীপের সৌন্দর্য যেন পূর্ণতা দেয় ভ্রমণকারীদের। কিন্তু সেই সৌন্দর্য দিনে দিনে বিলীন হচ্ছে পর্যটকদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের জঞ্জালে।
বছরের চার মাস ভ্রমণ মৌসুমে প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড় জমে সেন্ট মার্টিনে। সেখান থেকে ট্রলার, স্পিডবোট, ইজিবাইক, সাইকেল, মোটরসাইকেলে চেপে পর্যটকেরা আসেন ছেঁড়াদ্বীপে। সেন্ট মার্টিন থেকে জোয়ারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ছেঁড়াদ্বীপে জনবসতি নেই। কিন্তু পর্যটকের আনাগোনা বাড়তেই সেখানে ছুটে আসেন ভ্রাম্যমাণ হকাররা। চিপস, পানি, গোলা আইসক্রিম, চা, কফি, ডাব, তরমুজসহ হরেক রকম পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন তাঁরা। আর পর্যটকেরাও সেসব কিনে উচ্ছিষ্ট ফেলে যান ছেঁড়াদ্বীপেই। দিনের পর দিন প্লাস্টিক জমতে জমতে প্রবাল পাথরের দ্বীপ হারাতে শুরু করেছে তার সৌন্দর্য।
ছেঁড়াদ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, প্রবাল পাথরের ওপর ফেলে রাখা হয়েছে নানান প্লাস্টিকের বর্জ্য। এসবের মধ্যে পানির বোতল, প্লাস্টিকের কাপ, চিপসের প্যাকেট, বিস্কুটের প্যাকেট, স্ট্র ইত্যাদি। দ্বীপের মাঝে জেগে ওঠা কেয়া বনের ভেতরে রীতিমতো ডাস্টবিন তৈরি করা হয়েছে প্লাস্টিক আবর্জনা দিয়ে। দ্বীপে ঘুরতে এসে এমন চিত্র দেখে হতাশা প্রকাশ করেন পরিবেশবাদীরা।
বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জাকারিয়া বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও এতটা নোংরা পরিবেশ দেখিনি। ছেঁড়াদ্বীপে ভ্রমণ নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনের চোখের সামনেই এখানে পর্যটকেরা আসেন। কিন্তু আগে প্রবাল সংগ্রহ বা প্লাস্টিক ব্যবহারে কড়াকড়ি থাকত। প্লাস্টিকের জুতাও ব্যবহার করতে দেওয়া হতো না। এখন-সেখানে হকাররা ব্যবসা করছে। এটা খুবই হতাশাজনক।’
ছেঁড়াদ্বীপের প্রকৃতি ধ্বংসের এমন চিত্রের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ২১ জন লোক কাজ করছে বর্জ্য সংগ্রহে। তারাই সব পরিষ্কার করে রাখে। আর দ্বীপে প্লাস্টিক না ফেলার বিষয়ে পর্যটকদের সতর্ক হওয়া জরুরি। এত মানুষের ভেতরে সবাইকে তো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।’
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনে পর্যটক বেড়ে গেছে, সে জন্য দূষণও বেড়েছে। প্লাস্টিক সংগ্রহের জন্য কিছু সংস্থাও কাজ করছে। আর সতর্কতা সাইনবোর্ড ছেঁড়াদ্বীপে না থাকলে সেটা লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে। সবচেয়ে বড় বিষয়, আমরা ন্যাচারের ওপর যত অত্যাচার কম করব ন্যাচার ততই ভালো থাকবে। আমাদের নিজেদের সচেতন হওয়া বেশি জরুরি।’