চাকরি হারানোর ১০ বছর পর সরকারি মালিকানাধীন সার কোম্পানি ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) কমপ্লেক্সে ফিরেছেন মো. সাহাব উদ্দিন। ফিরেই টিএসপির কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) নিয়ন্ত্রণ নেন। সম্প্রতি বিনা ভোটে সংগঠনটির সভাপতি বনে যান।
২০০৯ সালে টিএসপিতে মাস্টার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন। ওই বছর তিনি সিনিয়র ফোরম্যান হিসেবে পদোন্নতি পান। কিন্তু সেটি গ্রহণ না করে উল্টো পদোন্নতি বাতিলের জন্য আবেদন করেন। কর্তৃপক্ষ সেই আবেদন মঞ্জুর না করায় দীর্ঘদিন উপস্থিত না থাকার কারণে ২০১৪ সালে তাঁর চাকরি চলে যায়।
চাকরি চলে যাওয়ার পর তিনি আইনি লড়াই শুরু করেন। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে একের পর এক মামলা করে সাহাব উদ্দিন চাকরি পুনর্বহালের চেষ্টা চালান। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চাকরিতে ফেরার আবেদনের ওপর ভিত্তি করে নিজ থেকেই অফিস করা শুরু করেন। যদিও তখন পর্যন্ত তাঁর আবেদনের বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি।
এভাবে তিনি অফিসে যাওয়া শুরু করলে বিপাকে পড়ে টিএসপি ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃপক্ষ। আইনি কোনো সুযোগ না থাকায় ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা এ বিষয়ে দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অন্যদিকে তাঁর বিষয়ে রাজনৈতিক চাপ আসতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে বোর্ড সভা আহ্বান করা হয়।
টিএসপির ৪৭২তম বোর্ড সভায় সাহাব উদ্দিনের চাকরি ফেরতের বিষয়ে আইনি মতামত চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী, বিসিআইসির প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট তোফায়েলুর রহমানের কাছে গত ১৬ মার্চ এ বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়। পরে ওই আইনজীবী তাঁর মতামতে বলেন, ‘শাহাব উদ্দিন তাঁর বরখাস্তের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একের পর এক মামলা করেন। কিন্তু কোনোটিতেই সফলতা পাননি। সর্বশেষ তিনি বিষয়টি জিইয়ে রাখতে চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে আইআর মামলা দায়ের করেন। সার্বিক বিবেচনায় তাঁর চাকরিতে যোগদান-সংক্রান্ত কোনো আইনি ভিত্তি আছে বলে মনে করি না।’
পরবর্তী সময়ে টিএসপির ৪৭৩তম কোম্পানি বোর্ড সভায় তাঁর চাকরি পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত হয়। পাঁচ পৃষ্ঠার কার্যবিবরণীতে শুধু তাঁর চাকরির বিষয়টি উল্লেখ ছিল। এতে বলা হয়, তাঁকে চাকরিতে ফিরতে না দিলে কারখানায় বিশৃঙ্খলা হতে পারে। উৎপাদনপ্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, রাজনৈতিক চাপেই তাঁকে ফেরানো হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেন সুখেন চন্দ্র বলেছেন, কোনো চাপে নয়, সার্বিক দিক বিবেচনা করেই সাহাব উদ্দিনের চাকরি ফেরত দেওয়া হয়েছে।
শাহাব উদ্দিন নিজেও রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক চাপ
সৃষ্টি করিনি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আমার চাকরিতে ফেরার জন্য আবেদন করি এবং সেই অনুযায়ী চাকরি ফিরে পেয়েছি।’