১৯৪৫ সালের পর এবারই সম্ভবত সবচেয়ে উত্তেজক মুহূর্ত পার করছে ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্ব। এমন দমবন্ধ করা ‘এই বুঝি যুদ্ধ লাগল’ পরিস্থিতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর আসেনি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে এই সংকটের শুরু সীমান্তে রাশিয়ার লক্ষাধিক সৈন্য মোতায়েনের মাধ্যমে। বলা হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশের সীমান্তে ১ লাখ ৩০ হাজার সৈন্য মোতায়েনের মাধ্যমে পুরো ইউক্রেনকে ঘিরে ফেলেছে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ।
স্বাভাবিকভাবেই এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউক্রেন। যৌক্তিক ব্যাখ্যা দাবি করেছে রাশিয়ার কাছে। কিন্তু রাশিয়া কোনো উত্তর দেয়নি।
এদিকে রাশিয়ার সৈন্য মোতায়েন দেখে যুক্তরাষ্ট্র বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলছে, যেকোনো সময় ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। দেশটি তার নাগরিকদের অতিসত্বর ইউক্রেন ত্যাগ করতে বলেছে। যদিও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুরু থেকেই বলে আসছেন, ইউক্রেনে হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা তাঁদের নেই। তবে মুখে হামলা চালানোর ইচ্ছা নেই বললেও রুশ সেনারা বেলারুশের সেনাদের সঙ্গে ঠিকই মহড়ায় অংশ নিয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার রুশ সৈন্য সেই মহড়ায় যোগ দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের (সিএফআর) প্রতিবেদন বলছে, ইউক্রেনের সক্রিয় সৈন্য রয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার। সেখানে রাশিয়ার সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ৯ লাখ।
ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণের মিসাইল লঞ্চার ইউক্রেনের আছে ৯০টি। রাশিয়ার তা ১৫১টি। ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান রয়েছে ১৬০টি, অন্যদিকে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান রয়েছে ১ হাজার ৮৫৭টি। কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধজাহাজ রয়েছে ইউক্রেনের মাত্র ১টি, আর রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ রয়েছে ১২টি।
এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে সব দিক থেকেই সমরশক্তিতে পিছিয়ে আছে ইউক্রেন। তাই অপেক্ষাকৃত দুর্বল ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের আরেক মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বেশ কিছু বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, সশস্ত্র যানবাহন এবং ট্যাংক পাঠিয়েছে ইউক্রেনে। পোল্যান্ডে প্রায় ৩ হাজার সেনা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্যই এই সেনা পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও গেরিলা যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলেও পশ্চিমা গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। গত ডিসেম্বরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০০ মিলিয়ন প্রতিরক্ষা প্যাকেজের অংশ হিসেবে অস্ত্রের দ্বিতীয় চালান পাঠিয়েছেন ইউক্রেনে।
রাশিয়া সব সময়ই সামরিক খাতে বেশি ব্যয় করে থাকে। ২০২০ সালে রাশিয়ার সামরিক ব্যয় ছিল ৬১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারি ব্যয়ের ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। সেখানে ইউক্রেনের কী অবস্থা? দেশটি ২০২০ সালে সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারি ব্যয়ের ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
ওই সময় ৫ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র, ইউআর-হান্ড্রেড মডেলের ১৩০টি ও আরটি-২৩ মডেলের ৪৬টি আন্তমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক মিসাইল, ৩৩টি হেভি বোম্বারসহ সব মিলিয়ে ১ হাজার ৭০০ ওয়ারহেড ছিল ইউক্রেনের মাটিতে।
নতুন করে দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা বাড়ে ১৯৯৪ সালে। সে বছর ন্যাটোর পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে ইউক্রেন যুক্ত হলে ভীষণ গোসসা করে মস্কো। নিন্দুকদের মতে, এর রেশ ধরেই ২০১৪ সালে ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দিয়ে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয় রাশিয়া। এর পর থেকে সময়ে-সময়ে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, সিআরএফ ও রয়টার্স
রাশিয়া ইউক্রেন সংকট সম্পর্কিত খবর আরও পড়ুন: