হোম > নারী

মিফতাহুলের সূচিশিল্প

টিনশেডের একটি বড় ঘরের এক পাশে ঝুলছে সিনথেটিকের রঙিন সুতা। অন্য পাশে ব্লক-বাটিকের টেবিল। তার ওপর ডাইসসহ বিভিন্ন রং ও বাটিকের উপকরণ। ঘরটির মেঝেতে বসে বেশ কয়েকজন নারী কাজ করছেন। কেউ কেউ বাড়িতে কাজ করার জন্য সেখান থেকে কাপড়-সুতাসহ বিভিন্ন উপকরণ বুঝে নিচ্ছেন।

টিনশেডের সেই কারখানার নাম ‘মুক্তা কনসেপ্ট স্টোর অ্যান্ড গার্মেন্টস’। এর মালিক মিফতাহুল জান্নাত। তাঁর সঙ্গে এই কারখানা ও গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে বসে কাজ করেন প্রায় ১২৫ জন নারী! মিফতাহুলের নেতৃত্বে এই নারীদের সূচিশিল্পের কাজের সুনাম এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশেও।

২০১৫ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেও শ্বশুরবাড়ির নিষেধের কারণে ইচ্ছা থাকলেও চাকরি করতে পারেননি মিফতাহুল। বছর পাঁচেক আগে ইউটিউবের একটি ভিডিও তাঁর ভাবনা-প্রক্রিয়া বদলে দেয়। সেই ভিডিওতে বলা হয়েছিল, ভালো লাগার কাজ করলে সাফল্য পাওয়া সহজ।

সেই ভিডিও দেখে মিফতাহুল তাঁর ভালো লাগার বিষয় সূচিশিল্প নিয়ে কাজ শুরু করেন। পাঁচ বছর পর এখন শুধু সুখ্যাতিই নয়, এ বছর অর্থনৈতিক ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। আর গত বছর স্মার্ট নারী উদ্যোক্তা হিসেবে রাষ্ট্রীয় অনুদান হিসেবে পেয়েছিলেন ৫০ হাজার টাকা।

মিফতাহুল যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের ইলিয়াস মাহমুদের স্ত্রী। ব্যক্তিগত জীবনে দুই ছেলে সন্তানের মা তিনি। ২০০৫ সালে এইচএসসি পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয়। ২০১৭ সালের শেষের দিকে মাত্র ৭ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এই টাকা দিয়ে একটি নকশিকাঁথা ও কিছু কাপড়ে ব্লক-বাটিকের কাজ করেন।

সে সময় নকশিকাঁথা ও কাপড় বিক্রি করে তিনি আয় করেন ৩০ হাজার টাকা। এরপর একটু একটু করে কাজের পরিধি বাড়াতে থাকেন। করোনাকালে ঘরে বসে অনলাইনে মিফতাহুল হাতের কাজের বেশ কিছু প্রশিক্ষণ নেন। তারপর মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কোর্সে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেন।

২০২১ সালে তিনি যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে নিজের কার্যালয় খুলে বসেন। একই বছর ইউএনডিপি আয়োজিত আনন্দ মেলা, বাণিজ্য মেলা ও এসএমই মেলায় তাঁর পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রিতে ব্যাপক সাড়া পড়ে। ২০২২ সালে তিনি মহিলা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে সেলস অ্যান্ড ডিসপ্লে সেন্টার বরাদ্দ পান। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে নিয়মিত পণ্য বিক্রি করেন অনলাইনে; বিশেষ করে জাপান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মিফতাহুলের পণ্যের বেশ কদর।

মিফতাহুল জান্নাতের মুক্তা কনসেপ্ট স্টোর অ্যান্ড গার্মেন্টস কারখানায় ১২৫ জন সূচিশিল্পীর সঙ্গে রয়েছেন ২৫ জন ইনচার্জ। সূচিশিল্পীরা নকশিকাঁথা, কাপড়ে নকশা তোলা, ব্লক-বাটিকের কাজ, পাটের বিভিন্ন পণ্য এবং ওয়ালম্যাট তৈরির কাজ করেন।

মিফতাহুলের মতো তাঁরাও চাকরি করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। তাঁর কারখানায় উৎপাদিত পণ্য প্রতি মাসে দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি হয়।

মিফতাহুলের কারখানায় কাজ করেন কৃষ্ণনগর গ্রামের আছিয়া খাতুন। সাংসারিক কাজের অবসরে নকশিকাঁথা ও কাপড়ে নকশার কাজ করে প্রতি মাসে তিনি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করেন।

এখানেই থেমে যেতে চান না মিফতাহুল জান্নাত। নারীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য একটি বড় গার্মেন্টস ও সূচিশিল্পকর্মের কারখানা করতে চান তিনি; যেখানে হাজারো নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সে জন্যই তিনি কারখানায় নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন। 

রোকেয়াকে ‘মুরতাদ’ বলা রাবি শিক্ষকের অপসারণ চায় মহিলা পরিষদ

ল্যানসেটের গবেষণা: শৈশবে ১০০ কোটি মানুষ যৌন সহিংসতার শিকার

মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় জীবনের গল্প

যৌতুক দাবি ও গ্রহণ করা এবং যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ

মোটরবাইকপ্রেমী নারীদের যাত্রা

কবি বাবার উদ্ভাবক কন্যা

জুলাই অভ্যুত্থানে বেগম রোকেয়া ছিলেন প্রেরণা হয়ে: নাহিদ ইসলাম

যৌনকর্মীদের মানবাধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিশ্চিতের দাবি সংহতির

দিলরুবা হক মিলি: বনরক্ষী এক নারীর গল্প

অতীতের আলো, বর্তমানের অন্ধকার