হোম > নারী

নারীদের গণিত বা ডিনার বলে কি কিছু আছে, টিকটকে কেন জনপ্রিয় এসব ভিডিও?

শর্ট ভিডিও শেয়ারিংয়ের প্ল্যাটফর্ম টিকটকে নারীদের সম্পর্কে প্রচলিত এবং পুরুষতান্ত্রিক গৎবাঁধা নেতিবাচক ধারণা থেকে তৈরি ভিডিও ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নারীদের চারিত্রিকভাবে দুর্বল, পরনির্ভরশীল এবং শপিংয়ের বাতিকগ্রস্ত বলে উপস্থাপন করা হয়।

সম্প্রতি টিকটকে নারীদের নিয়ে এমন বেশ কয়েকটি হাস্যরসাত্মক ট্রেন্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নারীরা নৈশভোজে কেমন খাবার খায়, কেমন করে খরচ করে, কেমন সাজগোজ করে সেগুলো এসব ভিডিওর মুখ্য বিষয়। ‘গার্ল ম্যাথ’, ‘গার্ল ডিনার’, ও ‘ক্লিন গার্ল অ্যাস্থেটিক’ হ্যাশ ট্যাগে ছড়িয়ে পড়া এসব ভিডিও এরই মধ্যে কয়েকশ কোটিবার দেখা হয়েছে। 

এ ট্রেন্ডগুলো হাস্যরসের খোরাক যেমন হয়েছে তেমন সমালোচনাও কুড়াচ্ছে। অনেকের ধারণা যেহেতু ‘গার্ল’ শব্দটি দিয়ে বালিকা বোঝানো হয়, তাই এ ট্রেন্ড দিয়ে নারীদের ব্যঙ্গ করে ‘শিশুসুলভ’ বলা হচ্ছে। এ ধরনের ট্রেন্ডের মাধ্যমে নারীদের প্রতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের গৎবাঁধা ধারণাগুলোই প্রকট হয়ে উঠছে।

‘গার্ল’ হ্যাশট্যাগে টিকটকে যতসব ট্রেন্ড চালু আছে এগুলোর মধ্যে গার্ল ম্যাথ জনপ্রিয় একটি। এই হ্যাশট্যাগের ভিডিওগুলোতে এখন পর্যন্ত ২৩ কোটি ২০ লাখ ভিউ হয়েছে। এ ভিডিওগুলোতে নারীরা অর্থ ব্যয়ের উদ্ভটসব হিসাব শেয়ার করেন। যেগুলোর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। 

টিকটকে ৭৭ হাজার লাইক পাওয়া ‘গার্ল ম্যাথ’ হ্যাশট্যাগের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারী বলছেন, ‘৩০০ ডলার দামের ব্যাগ প্রত্যেক দিন ব্যবহার করা মানে হলো প্রতিদিন এক ডলারেরও কম খরচ করা, যা বলতে গেলে বিনা মূল্যেই!’ 

আরেকটি জনপ্রিয় ‘গার্ল’ ট্রেন্ড হলো ‘গার্ল ডিনার’। এই হ্যাশট্যাগের ভিডিওগুলোতে ১৬০ কোটিরও বেশি ভিউ রয়েছে। ব্যবহারকারীরা এ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ব্যঙ্গাত্মকভাবে ‘নারীদের নৈশভোজের’ ভিডিও শেয়ার করছেন। এর একটিতে দেখা যাচ্ছে, এক থালা চিকেন নাগেট, একটি ব্রাউনি ও একটি ওয়াইনের গ্লাসে চকলেট মিল্ক। এ ভিডিও প্রায় ৩ লাখ লাইক পেয়েছে। আরেকটি ভিডিওতে নারীদের নৈশভোজ হিসেবে দেখানো হয়েছে মাত্র এক ক্যান রেড বুল। 

ট্রেন্ডের প্রেক্ষাপট
‘গার্ল’ ট্রেন্ডের শুরু হয় র‍্যাপ সংগীত শিল্পী মেগান দি স্ট্যালিয়নের জনপ্রিয় স্লোগান ‘হট গার্ল সামার’ দিয়ে। এ স্লোগান দিয়ে মূলত শরীর নিয়ে ইতিবাচক ধারণা তুলে ধরা হয়েছে। এটি পরবর্তীতে টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে মিমে পরিণত হয়। 

মেগান ২০১৯ সালের জুলাইয়ে এক পোস্টে বলেন, ‘হট গার্ল’ হওয়া মানে হলো অকুণ্ঠভাবে নিজস্বতা নিয়ে বাঁচা, জীবন উপভোগ করা, আত্মবিশ্বাসী হওয়া, নিজের সত্যবোধ নিয়ে বাঁচা ইত্যাদি।’ 

এর আগেও ২০১০–এর দশকে ‘গার্ল বস’ নামের এক স্লোগান বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নারীর ক্ষমতায়ন বোঝানো এই স্লোগান জনপ্রিয় করে মূলত ফ্যাশন ব্রান্ড ন্যাস্টি গাল। এই ব্রান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সোফিয়া অ্যামোরুসো তাঁর আত্মজীবনীর নাম রেখেছিলেন ‘গার্ল বস’। এই নামেই ব্রান্ড খোলেন তিনি। তবে পরবর্তীতে এর অর্থ বদলে পুরুষতান্ত্রিকতার চর্চাকারী বা অন্যের ওপর ভর করে সফলতা অর্জনকারী নারীদের বোঝানো শুরু হয়। 

নারীদের হেয় করা এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস প্রচার করার কারণে ‘গার্ল’ ট্রেন্ড বিশেষ করে ‘গার্ল ডিনার’ ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। ইন্টারনেট সংস্কৃতি নিয়ে প্রচারিত এক পডকাস্টের সহ–উপস্থাপক র‍্যাচেল হ্যাম্পটন ‘গার্ল ডিনার’ ট্রেন্ডটিকে ‘শিশুসুলভ’ বলে উল্লেখ করেন এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমরা খাবারেও কেন লিঙ্গভেদ করছি?’ তিনি এ ভিডিওর মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকে জনপ্রিয় প্রবণতায় পরিণত করার নিন্দা করেন। 

গার্ল ম্যাথ ট্রেন্ডটি নিয়েও চলছে তুমুল সমালোচনা। কারণ এ হ্যাশট্যাগে যত ভিডিও ছড়িয়েছে সবগুলোতেই ‘নারী আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষ নয়’, এমন বোঝানো হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে মার্কিন আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ‘মর্নিংস্টারের’ ব্যক্তিগত অর্থ ও অবসর পরিকল্পনার পরিচালক ক্রিস্টিন বেঞ্জ বলেন, ‘আমি এই ধারণাটিকে ঘৃণা করি যে, নারীরা প্রচুর টাকা খরচ করে এবং তারা অর্থ ব্যবস্থাপনায় ভালো নয়।’

রোকেয়াকে ‘মুরতাদ’ বলা রাবি শিক্ষকের অপসারণ চায় মহিলা পরিষদ

ল্যানসেটের গবেষণা: শৈশবে ১০০ কোটি মানুষ যৌন সহিংসতার শিকার

মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় জীবনের গল্প

যৌতুক দাবি ও গ্রহণ করা এবং যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ

মোটরবাইকপ্রেমী নারীদের যাত্রা

কবি বাবার উদ্ভাবক কন্যা

জুলাই অভ্যুত্থানে বেগম রোকেয়া ছিলেন প্রেরণা হয়ে: নাহিদ ইসলাম

যৌনকর্মীদের মানবাধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিশ্চিতের দাবি সংহতির

দিলরুবা হক মিলি: বনরক্ষী এক নারীর গল্প

অতীতের আলো, বর্তমানের অন্ধকার