হোম > নারী

শরবত বিকিয়ে চলে সংসার খরচ

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, মাদারীপুর

প্রচণ্ড দাবদাহে চরাচর খাঁ খাঁ করছে। সূর্যের প্রখর আলো ঘটাচ্ছে চোখের বিভ্রম। একটুখানি ছায়ার খোঁজে ছুটছে মানুষ। ঠিক এমন ছবির মধ্যে মাদারীপুর ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালের প্রধান গেটের পাশের ফুটপাতে দেখা মিলবে দুই নারীর। তাঁরা শরবত বিক্রি করছেন।

স্বস্তি পেতে আপনি তাঁদের কাছে চাইতে পারেন এক গ্লাস লেবুর শরবত। পান করা শেষ হলেই চলে যাবেন স্বাভাবিকভাবে; কিন্তু দুদণ্ড দাঁড়িয়ে যদি শোনেন, জানতে পারবেন তাঁরা সম্পর্কে মা ও মেয়ে। আপনার মতো ক্রেতার কাছে প্রায় সারা দিন লেবুর শরবত বিক্রি করেই চলে তাঁদের সংসার। জোগাড় হয় সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ।  

কৌতূহলী হয়ে জানতে চেয়েছিলাম তাঁদের পরিচয়। নারী বলেই হয়তো খুব সহজে কথাবার্তা শুরু হলো আমাদের। জানা গেল, মধ্য চল্লিশের এই নারীর নাম ফাতেমা বেগম। আর বছর বিশের তরুণীটির নাম সুরাইয়া আক্তার। তাঁরা মাদারীপুর সদর উপজেলার হাজীর হাওলা গ্রামের ৩ নম্বর ব্রিজ এলাকার রাজ্জাক ব্যাপারীর স্ত্রী ও মেয়ে। 

প্রতিদিন হাসপাতালে আসা-যাওয়ার পথে রোগী, সঙ্গে থাকা লোকজন এবং পথচারীরা এই লেবুর শরবতের ক্রেতা। এক গ্লাস শরবতের দাম ১০ টাকা। প্রতিদিন তাঁরা গড়ে দুই হাজার টাকার শরবত বিক্রি করেন। সেই টাকায় ফাতেমা বেগম চালান সংসার এবং সন্তানদের পড়াশোনার খরচ। 

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কথা চলতে থাকে। সুরাইয়া আক্তার জানান, তাঁর বাবা রাজ্জাক ব্যাপারী শীতে পিঠা বিক্রি করেন। কিন্তু শীত চলে গেলে তেমন একটা কাজ করতে পারেন না। মাঝেমধ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তা দিয়ে সংসার চলে না। সুরাইয়ার মামা শরবত বিক্রি করতেন। তাঁর পরামর্শে সুরাইয়া ও তাঁর মা এখন এ কাজ করছেন। ধীরে ধীরে এই শরবত বিক্রির অর্থই তাঁদের সংসারের প্রধান উপার্জন হয়ে ওঠে। 

ফাতেমা বেগম জানান, তাঁর বড় মেয়ে ফাত্তা আক্তার মাদারীপুর সরকারি কলেজে অনার্সে পড়েন। সুরাইয়াও কিছুটা পড়াশোনা করেন। কিন্তু অভাবের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকেই তিনি মায়ের সঙ্গে লেবুর শরবত বিক্রিতে সহযোগিতা করতে শুরু করেন। ফাতেমার আরেক মেয়ে অনন্যা আক্তার মাদারীপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। মিম আক্তার পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। ছোট মেয়ে ময়না আক্তার ও একমাত্র ছেলে দুজনই একসঙ্গে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। 

পাঁচ সন্তানের পড়ালেখার খরচ জোগানো দারুণ কষ্টের কাজ। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষেরাও সেটা করতে হিমশিম খান। আমি বলব, তাঁদের দেখে অন্যরাও নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করবেন।

গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে ফাতেমা বেগমের দোকানে শরবত পান করতে আসেন অটোরিকশার চালক সজীব হোসেন। মেয়েকে চিকিৎসক দেখাতে হাসপাতালে এনেছিলেন শহরের গোলাবাড়ি এলাকার সীমা আক্তার। তিনিও এলেন শরবত পান করতে। গ্লাসে লেবু চিপে পরিমিত পরিমাণ লবণ ও চিনির সঙ্গে বেশ দক্ষতায় মিশিয়ে এগিয়ে দিলেন ফাতেমা বেগম।  

মাদারীপুর মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক মাহমুদা আক্তার কণার সঙ্গে কথা হয় এ বিষয়ে। তিনি বলেন, ‘পাঁচ সন্তানের পড়ালেখার খরচ জোগানো দারুণ কষ্টের কাজ। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষেরাও সেটা করতে হিমশিম খান। আমি বলব, তাঁদের দেখে অন্যরাও নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করবেন।’

রোকেয়াকে ‘মুরতাদ’ বলা রাবি শিক্ষকের অপসারণ চায় মহিলা পরিষদ

ল্যানসেটের গবেষণা: শৈশবে ১০০ কোটি মানুষ যৌন সহিংসতার শিকার

মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় জীবনের গল্প

যৌতুক দাবি ও গ্রহণ করা এবং যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ

মোটরবাইকপ্রেমী নারীদের যাত্রা

কবি বাবার উদ্ভাবক কন্যা

জুলাই অভ্যুত্থানে বেগম রোকেয়া ছিলেন প্রেরণা হয়ে: নাহিদ ইসলাম

যৌনকর্মীদের মানবাধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিশ্চিতের দাবি সংহতির

দিলরুবা হক মিলি: বনরক্ষী এক নারীর গল্প

অতীতের আলো, বর্তমানের অন্ধকার