লাতিন আমেরিকার রাজনীতিতে এর আগে এমন কাউকে দেখা যায়নি। যার কথা বলছি, তিনি এক সময় গৃহকর্মীর কাজ করেছেন! পরে কাজ করেছেন পরিবেশকর্মী হিসেবে। সেখান থেকে রীতিমতো দেশ পরিচালনার কাতারে উঠে এসেছেন। তিনি কলম্বিয়ার এক নারী, নাম ফ্রান্সিয়া মার্কেজ। বিশ্বের আর কোনো রাজনীতিবিদের চেয়ে তাঁর সংগ্রামের গল্পটা আলাদা। একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী, দরিদ্র, বাস্তুচ্যুত, সমাজ নেত্রী, পরিবেশবাদী এবং নারীবাদী—তিনি নির্বাচিত হয়েছেন কলম্বিয়ার প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে। এবং এটি সেই যুগে, যখন কলম্বিয়ায় ২১৪ বছরের ডানপন্থী রাজনৈতিক আধিপত্য ভেঙে গিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে বসেছে বামপন্থী সরকার।
একজন কৃষ্ণাঙ্গ ‘সিঙ্গেল মাদার’ থেকে কলম্বিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার রাস্তাটা যে ফ্রান্সিয়ার জন্য সহজ ছিল, তেমন নয়। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব তীরে এবং কলম্বিয়ার দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তের কাউকা বিভাগের ছোট একটি গ্রাম ইয়োলোম্বোতে জন্ম নেন ফ্রান্সিয়া, ১৯৮১ সালে। তাঁর বাবা ছিলেন খনিশ্রমিক এবং মা কৃষক ও ধাত্রী। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়তে হয়েছে তাঁকে।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের সহায়তার জন্য ফ্রান্সিয়া প্রথমে শ্রমিকের কাজ নেন সোনার খনিতে। এরপর কিছুদিন কাজ করেন গৃহপরিচারিকা হিসেবে। এর মধ্যে মাত্র ১৩ বছর বয়সে জড়িয়ে পড়েন ওয়েভাইস নদী বাঁচানোর আন্দোলনে। সে নদীটি ছিল তাঁর সম্প্রদায়ের মানুষের একমাত্র পানির উৎস। কলম্বিয়ার একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এ নদীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পরিবেশ বিরুদ্ধ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সিয়া মার্কেজ নিজ এলাকা ও সম্প্রদায়ের মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। এ সময় তিনি পরিবেশ আন্দোলনকারী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
পরিবেশ আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে ফ্রান্সিয়া মার্কেজ ‘গোল্ডম্যান প্রাইজ’ পান। এ ছাড়া ২০১৯ সালে তিনি বিবিসি প্রকাশিত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পান। অথচ মাত্র ১৬ বছর বয়সে এক অনিশ্চিত জীবনে তিনি জন্ম দেন তাঁর প্রথম সন্তান। আন্দোলন সংগ্রামের জন্য অনেক মানুষকে সঙ্গে পেলেও সন্তান বড় করার লড়াইটা তাঁকে একাই করতে হয়।
২০১৯ সালে টুইটারে একটি পোস্ট করেন ফ্রান্সিয়া মার্কেজ। লেখেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই। আমি জনগণকে মুক্ত ও সম্মানজনক অবস্থানে দেখতে চাই। আমি চাই আমাদের অঞ্চলগুলো নবজীবন লাভ করুক।’ সে সময় অনেকেই তাঁর কথায় পাত্তা না দিলেও ফ্রান্সিয়া ঠিকই ২০২২ সালের মার্চ মাসে বামপন্থীদের ‘হিস্টোরিক প্যাক্ট’ জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়নের (প্রাইমারি) লড়াইয়ে সবাইকে বিস্মিত করে তৃতীয় স্থান দখল করেন। পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক গেরিলা যোদ্ধা পেত্রো তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট (রানিংমেট) হিসেবে ফ্রান্সিয়া মার্কেজকে বেছে নেন। নির্বাচনে বামজোট জয়লাভ করে।
তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, আফ্রিকান নিউজ