সখিনা বেগমের বয়স ৮৭ ছুঁই ছুঁই। দুই কিংবা তিন প্রজন্ম নয়; এই দীর্ঘ জীবনে তিনি দেখা পেয়েছেন পঞ্চম প্রজন্মের। মৃত্যুর আগে ষষ্ঠ প্রজন্মের সদস্যকে দেখে যেতে চান সখিনা বেগম। তাঁর সন্তান, নাতি-নাতনি ও তাঁদের সন্তানের সংখ্যা শতাধিক! মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার তুলণ্ড গ্রামের মরহুম খোরশেদ আলমের স্ত্রী সখিনা।
বয়সের ভারে কিছুটা ন্যুব্জ হলেও মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের কোনো ঘাটতি নেই সখিনা বেগমের। তাঁর মেয়ে খোদেজা খাতুনের বয়স এখন ৬৯ বছর। খোদেজার মেয়ে আমেনা খাতুনের বয়স ৫২, আমেনার ছেলে ওয়ালিদের বয়স ৩২ এবং ওয়ালিদের ছেলে আদিয়ানের বয়স ৫ বছর! সম্প্রতি ঘিওরের বানিয়াজুরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামে সখিনার বড় মেয়ের বাড়িতে বসেছিল এই পাঁচ প্রজন্মের মিলনমেলা।
আমরা যখন রাথুরা গ্রামে খোদেজা খাতুনের বাড়িতে উপস্থিত হই, তখন উঠানে পাতা চেয়ারে বসে পান চিবুচ্ছিলেন সখিনা বেগম। পাশে বসা মেয়ে খোদেজা খাতুন। ছিলেন খোদেজার মেয়ে আমেনা খাতুন, আমেনার মেয়ে রাইছা জাহান আদরের কোলে তাঁর ভাইয়ের মেয়ে আফিয়া ওয়ালিদ। সখিনা বেগমকে ঘিরে গল্পে মেতে উঠেছিলেন কমপক্ষে অর্ধশত নাতি-নাতনি ও তাঁদের সন্তানের সন্তানেরা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সখিনা বেগমের বাবার বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার তালুকনগর গ্রামে। ১৯৫৪ সালে ১৫ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় তুলণ্ড গ্রামের খোরশেদ আলমের সঙ্গে। ১৮ বছরে মা হন সখিনা। চার ছেলে, তিন মেয়ের জননী সখিনার নাতি-নাতনির সংখ্যা ২০ এবং নাতি-নাতনির সন্তান ৩০ জন। এ ছাড়া পঞ্চম প্রজন্মের উত্তরাধিকারীর সংখ্যা ৫।
সখিনা বেগমের বড় মেয়ে খোদেজার বিয়ে হয় ১৬ বছর বয়সে, রাথুরা গ্রামের লিয়াকত আলী খানের সঙ্গে। তাঁদের ঘরে জন্ম নেওয়া সাত সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে আমেনা খানমের বিয়ে হয় ১৯৮৮ সালে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। আমেনার বড় ছেলে ওয়ালিদ জাহান আকাশ ঘর বাঁধেন আফরোজার সঙ্গে। তাঁদের চার সন্তানের বড় ছেলে আদিয়ান এবার স্কুলে ভর্তি হয়েছে।
সখিনা বেগম জানিয়েছেন, যাঁদের দেখে বড় হয়েছেন, সমবয়সী কিংবা অনেক ছোট আপনজনের অনেকে আর বেঁচে নেই। তবে এখনো তিনি সচল, স্বচ্ছন্দেই হাঁটাচলা করেন, নামাজ পড়েন। সখিনার বড় মেয়ে খোদেজা খানম জানান, তাঁর মা এখনো ভালো শোনেন এবং চশমা ছাড়াই ভালো দেখতে পান। এই বয়সে এসে সখিনা নাতিনের ঘরের নাতনিদের সঙ্গে ফেলে আসা শৈশব-কৈশোরের গল্প করেন। এখন তাঁর ইচ্ছা, পুতিনের ঘরের নাতিন অর্থাৎ ষষ্ঠ প্রজন্ম দেখা।