হোম > বিজ্ঞান > গবেষণা

ঘুম ও জীবনের চেয়ে যৌনক্রিয়া বেশি প্রিয় যে প্রাণীর

প্রকৃতিতে যৌনতা স্বাভাবিক বিষয়। প্রায় সব প্রাণীই যৌনক্রিয়া বা যৌনসঙ্গমের মাধ্যমেই নতুন প্রজন্ম পৃথিবীতে আনে। কিন্তু সাধারণত প্রাণীর জীবনচক্রে অন্যান্য কার্যক্রমের চেয়ে স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার সময় থাকে স্বল্প। কিন্তু একপ্রকার ইঁদুর আছে, যেগুলো যৌনক্রিয়াকে বেশি প্রাধান্য দেয়। এমনকি ঘুম নষ্ট করেও এগুলো যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত থাকতে চায়। এই ইঁদুরগুলো মারাও যায় দ্রুত। 

বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার এই কামুক ইঁদুরগুলোকে ডাকা হয় অ্যান্টিকাইনাস নামে। এগুলোর পেটের নিচেও ক্যাঙারুর মতো থলে আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ইঁদুরগুলো সপ্তাহের পর সপ্তাহ কম ঘুমিয়ে বেশি জেগে থাকে, যাতে যৌনক্রিয়ায় বেশি সময় দেওয়া যায়। 

মজার ব্যাপার হলো, এরা জীবনে মাত্র এই প্রজনন মৌসুমই বেঁচে থাকে এবং এই এক মৌসুমেই সেগুলো বিপুলসংখ্যক নারী অ্যান্টিকাইনাসের সঙ্গে মিলিত হয়। সাধারণত, প্রতিবছরের আগস্টে এই প্রজাতির ইঁদুরের প্রজনন মৌসুম শুরু হয়। সে সময় টানা তিন সপ্তাহ ধরে পুরুষ অ্যান্টিকাইনাস যত বেশি সম্ভব নিজ প্রজাতির নারী ইঁদুরগুলোর সঙ্গে মিলিত হয় এবং এর ফল হিসেবে গণহারে পুরুষ অ্যান্টিকাইনাসগুলো মারা পড়ে। 

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ট্রোব ইউনিভার্সিটির প্রাণিবিদ এরিকা জায়েদ বলেন, ‘এই সময়টা খুবই সংক্ষিপ্ত কিন্তু অন্তরঙ্গ।’ তিনি আরও বলেন, সাধারণত পুরুষ অ্যান্টিকাইনাসগুলো একটিমাত্র বছরই জীবিত থাকে। পক্ষান্তরে স্ত্রী ইঁদুরগুলো অন্তত আরও একটি বছর বেশি বাঁচে।

বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এরিকা ও তাঁর সহযোগী গবেষকেরা ১০টি পুরুষ ও ৫টি নারী অ্যান্টিকাইনাসকে আলাদা করে বাছাই করেন এবং সেগুলোকে আলাদা আলাদা বাক্সে বন্দী করেন, যাতে সেগুলো মিলিত হতে না পারে। এই ইঁদুরগুলোর গলায় তাঁরা একটি করে সেনসর বেঁধে দিয়েছিলেন সেগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য এবং সেগুলোর রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করেছিলেন। 

গবেষকেরা দেখেছেন, বন্দী পুরুষ ইঁদুরগুলো প্রজনন মৌসুমে অনেক বেশি ঘোরাফেরা করে এবং বছরের বাকি সময়ের তুলনায় কম ঘুমায়। প্রজনন ঋতুতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় পুরুষ অ্যান্টিকাইনাসগুলোর প্রতিদিন ঘুমের সময় প্রায় ২০ শতাংশ কম ছিল। এমনকি একটি পুরুষ ইঁদুরের ঘুমের সময় ৫০ শতাংশেরও বেশি কম ছিল। প্রজনন ঋতুর শেষ দিকে দুটি পুরুষ ইঁদুর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মারা যায়। বাকি আটটি প্রজনন সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। 

বন্য পরিবেশেও ইঁদুরগুলোর ঘুমের এই কমতি থাকে কি না, তা নির্ধারণ করতে এরিকা ও তাঁর সহকর্মীরা প্রজনন মৌসুমের ঠিক আগে ও প্রজনন মৌসুম চলাকালে অ্যাজিল অ্যান্টিকাইনাস নামে একটি প্রজাতির ৩৮টি ইঁদুর সংগ্রহ করেন। পরে সেগুলোর শরীরে অক্সালিক অ্যাসিড পরিমাপ করেন। 

সাধারণত যখন কোনো প্রাণী কম ঘুমায়, তখন সেটির রক্তে অক্সালিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমে যায়। গবেষকেরা দেখেছেন, প্রজনন মৌসুমে পুরুষ অ্যান্টিকাইনাসের অক্সালিক অ্যাসিড তীব্রভাবে কমে যায়। এ থেকে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, পুরুষ ইঁদুরগুলো যৌনক্রিয়ার জন্য বেশি রাত জেগেছে। 

এরিকা ও তাঁর সহযোগীরা ভেবেছিলেন, হয়তো কম ঘুমের কারণেই পুরুষ অ্যান্টিকাইনাস দ্রুত মারা যায়। কিন্তু তাঁরা এর প্রমাণ পাননি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্ভবত পরিবেশগত কোনো একটি উপাদান বিশেষ করে হয়তো কোনো পরজীবী, যা প্রজনন মৌসুমের আগেই অ্যান্টিকাইনাসের শরীরে ঢুকে যায় এবং ক্রমেই তাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণার পরিকল্পনা করেছেন এরিকা ও তাঁর দল।

কৈশোর থামে বত্রিশে, বার্ধক্যের শুরু ছেষট্টির পর—চিহ্নিত হলো মস্তিষ্কের ৫ পর্যায়

প্রাণীদের প্রথম চুম্বন ২ কোটি ১০ লাখ বছর পুরোনো

৪০ হাজার বছর আগে একটি ম্যামথের জীবনের শেষ মুহূর্তের কথা জানলেন বিজ্ঞানীরা

শনির চাঁদে ‘অসম্ভব’ ঘটনা: তেল-জল মিশে যায় সেখানে

মানবমস্তিষ্ক অনুকরণে বাড়বে এআইয়ের দক্ষতা, কমবে বিদ্যুৎ খরচ: গবেষণা

বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত নতুন রং ছাদের তাপমাত্রা কমাবে ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত

গোপনে টিকে থাকার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এআই: গবেষণা

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

কোয়ান্টাম জগতের নিয়ন্ত্রণ হাতের মুঠোয় এনে নোবেল জিতলেন তিন বিজ্ঞানী

মানবদেহে রেগুলেটরি টি সেলের কাজ কী—যা আবিষ্কার করে নোবেল পেলেন ৩ বিজ্ঞানী