ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণসংক্রান্ত মামলায় আগামীকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি জানান, এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের বাধাও কেটে যাবে।
আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মান্না এসব কথা বলেন।
মান্না বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরে আমার নামে খেলাপি ঋণ এবং নির্বাচনে অংশ নিয়ে অনিশ্চয়তার ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা খবর ছড়িয়েছে। আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করতে আজ আপনাদের ডেকেছি।’
মান্না বলেন, ২০১০ সালে বগুড়ার শিবগঞ্জে ‘আকাফু কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেড’ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেন। তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম নাজমুল কাদির চৌধুরী। ওই বছর তাঁরা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বড়গোলা শাখা থেকে ২২ কোটি টাকা ঋণ নেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, ‘২০১২ সাল নাগাদ প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করে। এ সময় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কারণে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি হয়। এই সুযোগে ২০১৪ সাল নাগাদ নাজমুল কাদির ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেন এবং আমার নিয়োগকৃত কর্মচারীদেরও চাকরিচ্যুত করেন। ২০১৫ সালে শেখ হাসিনা সরকার আমাকে গ্রেপ্তার করে ২২ মাস কারাগারে রাখে।’
মান্নার দাবি, নাজমুল কাদির ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে ব্যবসার আয় দিয়ে আরেকটি কোল্ডস্টোরেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত তাঁকে শিবগঞ্জে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এরপর নাজমুল কাদির পালিয়ে যান। মান্না প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পান, কিন্তু এ সময়ের মধ্যে ঋণের পরিমাণ সুদ-বিলম্বসহ প্রায় ৩৮ কোটি টাকায় পৌঁছায়।
মান্না বলেন, ‘কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ মালিকানা থাকায় ঋণের বোঝা আমার ওপর পড়ে। আমি গত এক বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংক গত ১০ ডিসেম্বর ঋণ পুনঃ তফসিল অনুমোদন করে। নির্বাচনে অংশ নিতে আমাকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণখেলাপি তালিকা থেকে অব্যাহতি নিতে হবে। সেই বিবেচনায় আমি উচ্চ আদালতে আমার সিআইবি রিপোর্টের ওপর স্টে অর্ডারের জন্য রিট করি। ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ আমার পক্ষে রায় দেন। তবে সন্ধ্যার আগেই অদৃশ্য কারণে সেই স্টে অর্ডার রিকল করা হয়।’
মান্না আরও বলেন, ২৪ ডিসেম্বর আরেকটি বেঞ্চে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি এটিকে ‘ফ্যাসিবাদের পক্ষে দাঁড়ানো’ বলে মন্তব্য করেন।
আগামীকাল রোববার হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আবারও আবেদন করতে যাওয়ার কথা জানিয়ে মান্না বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করি, রায় আমার পক্ষে আসবে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো বাধা থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি বগুড়া-২, সিরাজগঞ্জ-১ এবং ঢাকা-১৮ আসন থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব ইনশা আল্লাহ।’