মানুষের অঙ্গের ঘাটতি মেটাতে শূকর থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন (জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন) ভবিষ্যতে মানুষের দান করা অঙ্গের চেয়ে উন্নত বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ড. রবার্ট মন্টগোমারি এই মত দিয়েছেন। তিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি (এনওয়াইইউ) ল্যাঙ্গোন ট্রান্সপ্লান্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং বর্তমানে জীবিত মানুষের শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ড. মন্টগোমারি জানান, এই ট্রায়ালের প্রথম প্রতিস্থাপন ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী জানুয়ারিতে আরেকটি অপারেশন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ছয়জন রোগীর শরীরে জিন-সম্পাদিত (জিন এডিটেড) শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে। এসব কিডনিতে ১০টি জিনগত পরিবর্তন আনা হয়েছে, যাতে মানবদেহে অঙ্গ প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকি কমে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদন দিলে এই ট্রায়াল আরও বিস্তৃত হয়ে ৪৪টি প্রতিস্থাপনে রূপ নিতে পারে।
বিশ্বজুড়ে মানব অঙ্গের তীব্র সংকট রয়েছে। যুক্তরাজ্যের এনএইচএস ব্লাড অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টের তথ্য অনুযায়ী, শুধু যুক্তরাজ্যেই গত ১০ বছরে ১২ হাজারের বেশি মানুষ অঙ্গ না পেয়ে মারা গেছেন বা অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। নতুন এই ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীরা এমন রোগী, যাঁরা মানব কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অনুপযুক্ত অথবা অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকলেও পাঁচ বছরের মধ্যে অঙ্গ পাওয়ার আগে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
ড. মন্টগোমারি নিজেও একজন ট্রান্সপ্লান্ট রোগী। বংশগত হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ২০১৮ সালে হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপন করান। তাঁর বাবা ও ভাই একই রোগে মারা যান। তিনি বলেন, মানুষের অঙ্গ কখনো পর্যাপ্ত সংখ্যায় মিলবে না। কিন্তু অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষার বাস্তবতা না বুঝলে এই সংকটের গভীরতা বোঝা যায় না।
মন্টগোমারি মানব অঙ্গের জোগান বাড়াতে ডোমিনো-পেয়ার্ড কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ও হেপাটাইটিস ‘সি’ আক্রান্ত দাতার অঙ্গ ব্যবহারের মতো উদ্যোগে পথিকৃৎ ভূমিকা রেখেছেন। তবু তাঁর মতে, এসব উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। জিন সম্পাদিত শূকর তৈরির প্রযুক্তিই জেনোট্রান্সপ্লান্টেশনকে বাস্তবের কাছাকাছি এনেছে।
ড. মন্টগোমারির ভাষায়, ভবিষ্যতে শূকরের অঙ্গ মানুষের অঙ্গের চেয়ে উন্নত হতে পারে। কারণ, এগুলো ধারাবাহিকভাবে জিনগতভাবে উন্নত করা সম্ভব, যা মানুষের অঙ্গে করা যায় না। এমনকি শূকরের থাইমাস অঙ্গ একসঙ্গে প্রতিস্থাপন করলে রোগীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এমনভাবে মানিয়ে নিতে পারে, একদিন হয়তো অ্যান্টিরিজেকশন ওষুধের প্রয়োজনীয়তাও কমে যাবে।
মন্টগোমারি জানান, প্রয়োজনে তিনি নিজেও ভবিষ্যতে শূকরের হৃদ্যন্ত্র নিতে আপত্তি করবেন না। তাঁর কথায়, ‘আমার সন্তানেরাও একই জেনেটিক ঝুঁকিতে আছে। আমি চাই, তারা যেন আমাদের চেয়ে বেশি বিকল্প নিয়ে বড় হতে পারে।’