বিএনপির গণসমাবেশের দুই দিন আগে থেকে রংপুরে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সামান্য দূরত্বে যেতেও তাঁদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া, অপচয় হচ্ছে সময়।
দুর্ভোগে পড়া পথচারীদের ক্ষোভের শেষ নেই। অনেকেই বলছেন, ‘নোংরা রাজনীতির’ কথা। রাজনীতির ‘মাইরপ্যাঁচে’ পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এতে বিএনপির নেতা কর্মী ও সমর্থকদের ভোগান্তিতে ফেলতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর বেশ ক্ষুব্ধ। যদিও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলছেন, ধর্মঘট সরকার ডাক দেয়নি। মোটর মালিক সমিতি তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে দুই দিনের ধর্মঘট ডেকেছে। তাদের এই ধর্মঘট ডাকার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পথচারী এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে ধর্মঘট নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেছেন, “রংপুরে ধর্মঘট ডাক দেওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁকে জানানোও হয়নি। রংপুর জেলা মোটর শ্রমিকেরা তাঁদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য ধর্মঘট ডেকেছে। এখানে সরকারেরও কোনো হাত নেই। আমার বাড়ি রংপুরে। জানি না, সমাবেশকে বানচাল করার জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে কি না। তবে পরিবহন ধর্মঘট না হলেও সমাবেশের দিন পরিবহন নিয়ে কেউ বের হতো না। কারণ মালিকেরা ক্ষতির ভয়ে পরিবহন বের করতেন না।” মসিউর রহমানের মতো এসব বক্তব্য হচ্ছে শুধু মানুষকে ধোঁকা দেওয়া। এখন মানুষ তাদের মিথ্যা রাজনীতি ও মিথ্যা মুখের বুলি বুঝতে পারে।’
শাহ আলম নামের এক পথচারী ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, ‘বিএনপির নেতা কর্মীকে শিক্ষা দিতে গিয়ে আজ আমরা সাধারণ মানুষ শিক্ষা পাচ্ছি। এই নোংরা রাজনীতি কি বন্ধ হবে না।’
রাজু আহম্মেদ নামে আরেক পথচারী বলেন, ‘পরিবহন ধর্মঘটের কারণে রিকশা অটোরিকশায় পথ চলতে হচ্ছে। এতে ১০০ টাকার ভাড়া দিতে হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। বাসে এক ঘণ্টার পথ এখন অটোরিকশায় যেতে সময় লাগছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। কিন্তু আজ রাজনীতির শিকার আমরা।’
সমাবেশের আগে হঠাৎ করে বাস ধর্মঘটের বিষয়ে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু বলেন, ‘আমাদের সমাবেশে যাতে নেতা কর্মীরা আসতে না পারে সে জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ ভাবছিল পরিবহন ধর্মঘট দিলে বিএনপির নেতা কর্মীরা সমাবেশে আসতে পারবে না। কিন্তু তারা কখনো ভাবেননি এই ধর্মঘটের কারণে সাধারণ মানুষ কতটা ভোগান্তির শিকার হবেন।’
তবে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিয়ার রহমান সাফি বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশে আওয়ামী লীগের কোনো বাধা নেই। আওয়ামী লীগ চায় তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করুক।’ তিনি বলেন, ‘জেলা মোটর মালিক সমিতি পরিবহন ধর্মঘট ডাক দিয়েছে, এখানে আওয়ামী লীগের কোনো হাত নেই। কিন্তু বিএনপির লোকজন নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে।’
হঠাৎ বাস ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার উপলক্ষ কী জানতে চাইলে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অবৈধ নসিমন করিমনে ভরে গেছে রংপুরের বিভিন্ন সড়ক। তাই অবৈধ যানবাহনসহ সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধের দাবিতে দুই দিনের ডাক দেওয়া এই পরিবহন ধর্মঘট আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় হচ্ছে।’