আহমদিয়া জামায়াতের ‘সালানা জলসা’ বন্ধকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তরা বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি দুটি বিদ্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয় দুটিতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে এলেও তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করছেন।
দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া বিদ্যালয় দুটি হলো আহমদনগর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও আহমদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে আহমদনগর এলাকায় গড়ে ওঠা পাশাপাশি বিদ্যালয় দুটিতে আজ রোববার দুপুর ১২টায় সরেজমিন দেখা যায়, কোনো শিক্ষার্থী আসেনি। বিদ্যালয়ের কক্ষগুলো থেকে এখনো পোড়া গন্ধ বেরোচ্ছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া টিন, ইটসহ অন্য সামগ্রী।
দুই দিন সরকারি ছুটির পর আহমদনগর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে এসেছেন শিক্ষকেরা। পোড়া কক্ষগুলোর অদূরে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আলোচনা করছিলেন। সেখানে কথা হয় সহকারী শিক্ষক ইয়াসমিন আরা বেগমের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাসার লোকজন বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে আসতে দিচ্ছিল না। কিন্তু মন মানছে না। তাই আজ সকালে উঠে আসছি। এখানে এসে দেখি সব পুড়ে গেছে। বসার জায়গা নেই। বাচ্চাদের পড়াব কোথায়। এখন আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কাদিয়ানী মনে করে যদি আমাদেরও রাস্তায় ধরে মারধর করে।’
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুয়েল প্রধান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগুনে পুড়ে বিদ্যালয়ের ৯০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তা সরেজমিন ঘুরে গেছেন। ৩০০ জন শিক্ষার্থীর একজনও আজ বিদ্যালয়ে আসেনি। জানি না, এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে। কবে পুরোদমে পাঠদান করাতে পারব। থানায় মামলা দিয়েছি। এখনো নথিভুক্ত হয়নি। পুলিশ সকাল-সন্ধ্যা ঘোরাচ্ছে। আমাদের শিক্ষকেরাও এই ঘটনার পর আতঙ্কে রয়েছেন।’
এ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। প্রধান শিক্ষককে আইনি পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। তবে এলাকায় পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হওয়া শিক্ষার্থীরা ভয়ে আছে। তারা বিদ্যালয়ে আসছেন না।’
এদিকে আহমদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও শিক্ষকেরা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়ে বিদ্যালয়ের পোড়া ভবনের ঘুরে দেখছিলেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুড়ে গেছে বেঞ্চ, চেয়ার, আসবাবসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।
আহমদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আয়েশা সিদ্দিকা কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১২০ জন শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস করাই। বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় বন্ধ করে বাড়িতে যাই। শুক্রবার আমাদের বিদ্যালয়টিও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সবকিছু পড়ে গেছে। ভয়ে থানায় যেতে পারছি না। অভিযোগ দিতে গেলে যদি আমাদের মারে। শুনেছি থানাও নাকি পুড়িয়ে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে দুর্বৃত্তরা বিদ্যালয়ে আগুন দিয়েছে। যারা আগুন দিয়েছে, তাদের শিশুরাও তো কোনো না কোনো বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। আমরা এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, দুই-তিন দিনের মধ্যে বিদ্যালয় পাঠদানের উপযোগী করে তুলবেন।’
আরও পড়ুন: