নয় মাসের গর্ভবতী কল্পনা আকতার (২০) স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন। চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে কর্তব্যরত মিডওয়াইফ সুরভি আকতার ওই গৃহবধূর প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে কম্পিউটারে কম্পোজ করা একটি ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) তাঁর হাতে তুলে দেন। আর এ ব্যবস্থাপত্র নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
ব্যবস্থাপত্রে গর্ভবতী কল্পনা আকতারকে ২৪ ঘণ্টায় ৯টি ৫০০ মিলিগ্রাম ক্ষমতাসম্পন্ন নাফা (প্যারাসিটামল) ও ২০ মিলিগ্রাম ক্ষমতাসম্পন্ন ইসমোপ্রাজল ৬টি করে সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট (গাইনি এবং অবস) ডা. হাসিনা ফেরদৌসি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি অবশ্যই একটি ভুল চিকিৎসা। ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।’ ওই নারীকে দ্রুত ওষুধ সেবন বন্ধ করার পরামর্শ দেন তিনি।
ডিমলা সদর ইউনিয়নের পাটোয়ারি পাড়ার দিনমজুর মাহবুর ইসলামের স্ত্রী কল্পনা আকতার। এটিই তাঁর প্রথম গর্ভধারণ। শাশুড়ি রানী বেগমকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এসেছিলেন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। রানী বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রেসক্রিপশন নিয়ে হাসপাতালের সামনে একটি ওষুধের দোকানে ওষুধ কিনতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারি। দোকানদার ভাইয়ের পরামর্শে তিনটি নাফা ট্যাবলেট ও দুইটি ইসমোপ্রাজল এক সঙ্গে সেবন করতে দেইনি রোগীকে।’
বাড়ির আঙিনায় বসে কথা হয় কল্পনা আকতারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা পড়ালেখা জানি না এবং ওষুধ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। ডাক্তার যা দেয়, তাই আমরা বিশ্বাস করে সেবন করি। প্রেসক্রিপশনের এ ওষুধ সেবন করলে আমার ও আমার গর্ভের সন্তানের যে কি হতো! আমি এর বিচার চাই।’
ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন ভুল কোনো চিকিৎসকের হতে পারে না। তবে দালালদের চক্র এমনটি করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।’
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলীপ কুমার বলেন, ‘মিডওয়াইফ কোনো চিকিৎসকের তালিকায় পড়েন না। তিনি কীভাবে একজন গর্ভবতী নারীর ব্যবস্থাপত্র দিলেন? কম্পিউটার কম্পোজে ভুল হতে পারে এটা অযৌক্তিক। কম্পোজের পরে ব্যবস্থাপত্রটি অবশ্যই যাচাই করে তিনি তো স্বাক্ষর করেছেন।’
নীলফামারী সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ব্যবস্থাপত্রে এমন ভুল চিকিৎসকের জন্য ইতিবাচক নয়।’ বিষয়টি তদন্তে করে এর সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।