হোম > সারা দেশ > রংপুর

দরিদ্র পিতার দুই কন্যাকে উদ্যোক্তা বানিয়েছে করোনা

এম মেহেদী হাসিন

রংপুর: মারিয়া আক্তার ও মারুফা আক্তার দুই বোন। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে কয়েক মাস বাড়িতে বেকার সময় পার করছিল তারা। এভাবে বেশি দিন বসে থাকতে ভালো লাগছিল না ছোট বোন মারিয়ার। পাশের গ্রামে ব্যাগ তৈরির ছোট কারখানা ছিল। বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে সেখানে কাজ নেয় মারিয়া। পাঁচ মাস কাজ করার পর চাকরি ছেড়ে দেয়।

নিজেই কিছু একটা করার তাড়না পেয়ে বসে তাকে। আগে থেকেই সেলাইয়ের কাজ জানত মারিয়া। তাই চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জমানো পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ফেলে একটি পুরোনো সেলাই মেশিন। তারপর কাজ শেখায় বড় বোন মারুফাকেও। দুই বোন মিলে শুরু করে ব্যাগ সেলাইয়ের কাজ। পড়াশোনার ফাঁকে শুরু হয় দুই বোনের স্বপ্নবুনন।

নতুন উদ্যোক্তা এ দুই বোনের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রাধানগর বালাপাড়ার ইসলামপুর গ্রামে। ছোট বোন মারিয়া আক্তার দশম শ্রেণির ছাত্রী, আর বড় বোন মারুফা গত বছর এইচএসসি পাস করেছেন। পরিবারে আছেন বাবা, মা ও ছোট ভাই। ছোট ভাই দশম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা আবদুল মালেক ভ্যানচালক। মা মনিরা বেগম গৃহিণী।

মারিয়া ও মারুফাদের অভাবের সংসার। বাবা আবদুল মালেক ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার করেন তা দিয়ে তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ জুগিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। ভূমিহীন আবদুল মালেকের সম্পদ বলতে আছে শুধু ছয় শতক জমির ওপর পৈতৃক বাড়ি ও আটটি ছাগল। গত বছর উদ্দীপন, আশা, ব্র্যাকসহ কয়েকটি এনজিও থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ তুলে জরাজীর্ণ মাটির ঘর ভেঙে নতুন ঘর তুলেছেন। একটি গরু ছিল, সেটিও বিক্রি করতে হয়েছে। বর্তমানে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে প্রতি সপ্তাহে আয়ের বড় অংশ চলে যায়। ফলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে আবদুল মালেকের। বাবার এমন অনটনের সংসারে পরিবর্তন আনতে চায় মারিয়া ও মারুফা। হাসি ফোটাতে চায় বাবা–মায়ের মুখে।

প্লাস্টিকের বস্তা কিনে সেগুলো দিয়ে বাজারের ব্যাগ তৈরি করে মারিয়ারা। তাদের সহযোগিতা করেন মা মনিরা বেগম। প্রতিটি ব্যাগ আট টাকা দরে বাজারে বিক্রি হয়। ব্যাগ তৈরিতে খরচ হয় ৩ টাকা। পাঁচ মাসের নতুন উদ্যোগে তারা এখন মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করছে। তাতে সংসার চালাতে কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে বাবা আবদুল মালেকের।

ছোট এই উদ্যোগকে বড় করার স্বপ্ন দুই বোনের। তবে লোকবলের সংকটের কারণে তৈরি করা ব্যাগ সঠিকভাবে বাজারজাতকরণ সম্ভব হচ্ছে না। ছোট ব্যবসা, তাই লোক নিয়োগ দেওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। অন্যদিকে বড় উদ্যোক্তারা ব্যাগের বাজার দখল করে আছেন। ফলে বাজারে নিজেদের ব্যাগের চাহিদা তৈরি করতে পারছে না তারা। তবে মারিয়ারা হাল ছাড়তে রাজি নয়। যেকোনো মূল্যে এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে চায় তারা। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে খুব সহজেই ব্যবসা বড় করা যেত বলে তাদের বিশ্বাস।

মারিয়া বলে, ‘বাজারে চাহিদা তৈরি করতে পারলে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি ব্যাগ তৈরি করা যেত। এতে মাসে ২০ হাজার টাকার বেশি আয় হতো। তখন লোক রেখে ব্যবসা বড় করা যেত।’

ব্যাগ তৈরির পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়ম করে পড়তে বসে দুই বোন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ৯টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে কাজে বসে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে। তাই বাবা–মাও তাদের ওপর সন্তুষ্ট।

মারিয়াদের মা মনিরা বেগম বলেন, ‘ছইলেরা বাপের কষ্ট দেখি বসি না থাকি কিছু করবার চায়। হামরাও নিষেধ করি না। এখন স্কুল–কলেজ বন্ধ। কাজ করবার চাইছে করুক। কাজও করুক, পড়াশোনাও করুক।’

পীরগঞ্জে ধানখেত থেকে অটোভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার

হাদির ওপর গুলির প্রতিবাদে গাইবান্ধায় বিএনপির বিক্ষোভ

নীলফামারীতে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু

৮ হাজার টাকা চুরি করতেই সস্ত্রীক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা: পুলিশ

রংপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় টাইলসমিস্ত্রি গ্রেপ্তার

সারের দাবিতে কৃষকদের মহাসড়ক অবরোধ

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি

রংপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

রংপুর বিভাগীয় ইজতেমার প্রথম দিনেই দুই মুসল্লির মৃত্যু

অবৈধ ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান, ২ লাখ টাকা জরিমানা