লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ভারতীয় একজন নাগরিক নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে ভারতীয় সীমান্তের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম রাকেশ হোসেন (৩০)। তিনি ভারতের কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা থানার উত্তর টেপুরগাড়ী এলাকার হাফিজুল ইসলামের ছেলে।
সীমান্তে গুলি ছোড়া ও নিহতের ঘটনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিএসএফকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে চিঠি দেয়। আজ দুপুরে উভয় দেশের ২৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলের পাশে পতাকা বৈঠকে মিলিত হয়।
প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে ১২ সদস্যের নেতৃত্ব দেন বিজিবি, রংপুর ৬১ (তিস্তা-২) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মোহাম্মদ মুসাহিদ মাসুম। অপরদিকে বিএসএফের পক্ষে ১২ সদস্যের নেতৃত্ব দেন ১৬৯ কোচবিহার রানীনগর বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট অজয় কুমার।
কমান্ডার পর্যায়ের এ বৈঠকে বিএসএফকে সীমান্তে গুলি ছোড়ার প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। উভয় দেশের সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি-বিএসএফ টহল ও নজরদারি বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে সভা শেষ করা হয়।
সীমান্ত সূত্র ও বিজিবি সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার রাতে মাথাভাঙ্গা থানার উত্তর টেপুরগাড়ী এলাকা ও পাটগ্রাম সদর ইউনিয়নের টেপুরগাড়ী গ্রামের ডাঙ্গা এলাকা উভয় দেশের সীমান্তের ৮৫৭ নম্বর প্রধান পিলার ও উপপিলার ৫ এর কাছে ভারত ও বাংলাদেশের পাঁচ-ছয়জন জন যুবক জড়ো হোন। বাংলাদেশি যুবকেরা ভারতীয় যুবকের সহায়তায় গরু, কসমেটিকস, শাড়িসহ নানা পণ্য এ দেশে পাচার করতেন। এ সময় ভারতের ১৬৯ কোচবিহার রানীনগর বিএসএফ ব্যাটালিয়নের মীররাপা বিএসএফ ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা তাঁদেরকে দেখে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
এতে ভারতীয় নাগরিক রাকেশের শরীরের ডান দিকের ঊরুতে গুলি লেগে বের হয়ে যায়। সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ গজ ভারতের অভ্যন্তরের ঘটনাস্থলে গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে থাকে ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাকেশের মৃত্যু হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভারতের অভ্যন্তরে সীমান্তে লাশ পড়েছিল। আজ দুপুরে বিএসএফের সহায়তার মাথাভাঙ্গা পুলিশ লাশ মাথাভাঙ্গা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় সীমান্তে জরুরি পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানায় বিজিবির, রংপুর ৬১ (তিস্তা-২) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এ ব্যাপারে বিজিবি, রংপুর ৬১ (তিস্তা-২) ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের (সিও) শেখ মোহাম্মদ মুসাহিদ মাসুম বলেন, ‘সেক্টর, ব্যাটালিয়ন ও কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে কমিউনিকেশন হয়েছে। প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, এভাবে মারা তো ঠিক না। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে কোনো নাগরিকের মৃত্যু হোক, এটা আমরা প্রত্যাশা করি না। তাদের (বিএসএফের) ছোড়া গুলিতে যদিও তাদের দেশেরই নাগরিক নিহত হয়েছে। আমরা সীমান্তে গুলি ছোড়ার প্রতিবাদ করেছি। ভবিষ্যতে যেন না হয় তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।’