গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও জ্বালানি-সংকটের কারণে রংপুরের পীরগাছায় চাহিদা বাড়ছে গোবরের তৈরি লাকড়ির। এসব লাকড়ি এখন শুধু গ্রামে নয়, বিক্রি হচ্ছে শহরেও। দফায় দফায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও জ্বালানি কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের অনেকেই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার বন্ধ করে ঝুঁকছেন গরুর গোবরের তৈরি লাকড়ি ব্যবহারের দিকে।
বর্তমানে গ্রামগঞ্জ ও শহরে জ্বালানি-সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করায় বেশি কষ্টে আছে গ্রামাঞ্চলের পরিবারগুলো। সেই সংকট কাটাতে এই উপজেলার যেসব বাড়িতে গরু পালন করা হয়, তাদের বেশির ভাগ বাড়িতেই তৈরি করা হচ্ছে এসব গোবরের লাকড়ি। গ্রামের নারীরা জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এসব লাকড়ি তৈরি করছেন পুরোদমে। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা নিজেদের জ্বালানি চাহিদা মিটিয়ে পাইকারি হিসেবে বিক্রি করে অভাবী সংসারে অর্থও জোগান দিচ্ছেন।
যাঁরা এই লাকড়ি তৈরি করেন, তাঁদের কাছে জানা যায়, গোবরের এই লাকড়ি তৈরি খুব সহজ, খরচও কম। এই জ্বালানি তৈরিতে উপকরণ হিসেবে প্রয়োজন গরু বা মহিষের গোবর, পাটখড়ি, ধানের তুষ (কুঁড়া)। গোবরের লাকড়ি তৈরির আগে পরিমাণমতো পাটখড়ি কেটে গোবর ও তুষ (কুঁড়া) একত্রে মিশিয়ে পাটখড়ির সঙ্গে এঁটে রোদে শুকাতে হয়। এ ছাড়া মুঠো করে রোদে শুকিয়েও ব্যবহার করা যায়। যার নাম অঞ্চলভেদে গোবরের লাকড়ি বা মুঠি।
তাঁরা জানান, প্রতি ১০০ লাকড়ি ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাইকারেরা এসব লাকড়ি জ্বালানি হিসেবে কিনে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করেন। অনেকে আবার হোটেল-রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করেন।
পীরগাছা উপজেলার তালুক ইসাদ গ্রামের গৃহবধূ মোসলেমা বেগম বলেন, ‘আমার ৪টি গরু ও গোবর দিয়ে আমি লাকড়ি বানাই। নিজের জ্বালানোর জন্য রাখি, এরপর বিক্রি করি। এসব লাকড়ি বিক্রি করে সংসারের খরচে জোগান দিই।’
এ বিষয়ে পীরগাছা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান রেজা বলেন, ‘যেভাবে গ্যাসের দাম বাড়ছে, তাতে গ্রামের মানুষ কী করবে! তাই তারা গোবরের লাকড়ি তৈরি করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে।’
প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতি কেজি গ্যাসে মূসকসহ ১০৩ দশমিক ৩৪ টাকা সমন্বয় করে ঘোষণা দিয়েছে, যা আগে ছিল ৯৮ দশমিক ১৬৬ টাকা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির প্রতিটি সিলিন্ডারের দাম ৬২ টাকা বেড়েছে। এতে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বেড়ে দাঁড়াল ১ হাজার ২৪০ টাকায়।