‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট। রাত সাড়ে ১০টার পরে ফোন দেবে বলেছিল কিন্তু দেয়নি। নেটে পাইছি, কিন্তু ফোন ধরেনি। বলেছিল আধা ঘণ্টা রেস্ট নিয়া ডিউটিতে যাওয়ার আগে ফোন ব্যাক করবে। সেই আধা ঘণ্টা আর শেষ হচ্ছে না। ফোনে ওর রক্ত দেখছি। আমার মাসুদের হাত নাই। কেউ আমারে ফোন ধরায়ে দাও। আমি শুধু এক মিনিট কথা বলতে চাই। আমার মাসুদের হাত নাই...।’ এভাবেই আহাজারি করছিলেন সুদানে নিহত শান্তিরক্ষী করপোরাল মাসুদ রানার স্ত্রী আসমা উল হুসনা আঁখি (২৭)। স্বামীর শেষ কণ্ঠ শোনার আকুতি নিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।
বাড়ির আরেক পাশে বিলাপ করছিলেন মাসুদের মা মোছা. মর্জিনা খাতুন। ‘ব্যাটা ব্যাটা’ বলে বারবার ছেলের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলছিলেন, ‘আমার খোঁজ কে নিবে ব্যাটা? চুলে কে তেল দিয়া দিবে? কত কষ্ট কইরা মানুষ হইছো ব্যাটা। আমারে স্বপ্ন দেখাইয়া চইলা গেলা’ বলেই হাউমাউ করে কাঁদছিলেন তিনি।
শোকে পাথর হয়েছেন দুই ভাই জনি ও রনি। আর প্রিয় বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্য ছটফট করছে একমাত্র মেয়ে মাগফিরাতুল মাওয়া। স্ত্রী, মা ও স্বজনদের আহাজারিতে মাসুদের গ্রামের বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শান্তিরক্ষী মাসুদ রানার গ্রামের বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়ায়। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) বেলা ২টা ৪৭ মিনিটে মাসুদ রানার লাশ বহনকারী সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার উপজেলার করিমপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করে। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ৩টা ১২ মিনিটে বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের বাড়িতে লাশ আনা হয়। পরে বোয়ালিয়াপাড়া হাইস্কুল মাঠে ৩টা ৫৪ মিনিটে জানাজা শেষে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়।
নাটোর স্টেডিয়ামের আর্মি সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ বলেন, ‘শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। আমরা শোকাহত এবং শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’