হোম > সারা দেশ > কুমিল্লা

সম্পদে সাক্কু ও মামলায় কায়সার এগিয়ে, নৌকার রিফাতের নেই নগদ টাকা

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীদের মধ্যে সম্পদে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। প্রার্থীদের মধ্যে ফৌজদারি মামলায় শীর্ষে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হওয়া নিজাম উদ্দিন কায়সার। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক জানিয়েছেন পেশায় ঠিকাদার হলেও তাঁর কাছে কোনো নগদ টাকা নেই। প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

আসন্ন কুসিক নির্বাচনের ছয় মেয়র পদপ্রার্থী হলফনামা জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন—বিএনপিপন্থী মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার, আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত রাশেদুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল ও মাসুদ পারভেজ খান ইমরান।

নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত হলফনামায় জানিয়েছেন, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ; জন্ম ১৯৫৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। ২০০১ সালের একটি হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ায় তিনি বর্তমানে কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত নন। পেশায় ঠিকাদার হলেও তাঁর কাছে কোনো নগদ টাকা নেই। নিজের আয়ের উৎস হিসেবে তিনি কৃষি খাত, বাড়ি ও দোকান ভাড়া, ব্যবসাকে দেখান। এই খাতগুলো থেকে তাঁর মোট বার্ষিক আয় ২২ লাখ ২১ হাজার ৮০০ টাকা দেখানো হয়েছে।

হলফনামায় রিফাত পরিবারের সদস্য ও অন্য উৎস থেকে বার্ষিক ৭ লাখ টাকার বেশি আয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এবং স্ত্রীর স্বর্ণালংকার, পোস্টাল ও বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রে ৭৮ লাখ টাকার বেশি জমা থাকা এবং একটি কোটি টাকার জিপ গাড়িসহ দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ঢাকা ও কুমিল্লায় একটি করে দুটি ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করলেও জানিয়েছেন, তাঁর কাছে কোনো নগদ অর্থ নেই।

মনিরুল হক সাক্কু কুসিকের দুবারের মেয়র। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। হলফনামায় তিনি জানিয়েছেন, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। জন্ম ১৯৬২ সালের ১১ ডিসেম্বর। তাঁর বিরুদ্ধে বর্তমানে দুদক ও আয়কর আইনের দুটি মামলা বিচারাধীন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে থাকা হত্যাসহ ফৌজদারি ও অন্যান্য আইনে করা ১০টি মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি বা খালাস পেয়েছেন।

বিএনপিপন্থী এ মেয়র পদপ্রার্থীর সম্পদ গত পাঁচ বছরে অনেকটা বেড়েছে। হলফনামায় উল্লিখিত তথ্যমতে, ২০১৭ সালে হলফনামায় সাক্কুর নিজ নামে নগদ ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩০৬ টাকার কথা বলা ছিল। এবার নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯২ টাকায়। স্ত্রীর নামে ২০১৭ সালে ছিল ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫২৩ টাকা, যা এবার হয়েছে ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৮২১ টাকা। এ বছরের তথ্যে তার বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য খাতে আয় দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা। এ খাতে নির্ভরশীলদের কাছ থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৬৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩৬ টাকা। ব্যবসা খাতে নির্ভরশীলদের আয় বছরে ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। তিনি মেয়র হিসেবে বার্ষিক সম্মানী ভাতা পেয়েছেন ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কোম্পানিতে নিজের ও স্ত্রীর নামে জমার পরিমাণ ১ কোটি টাকার বেশি। যানবাহনের মধ্যে আছে নিজের নামে একটি ল্যান্ডক্রুজার জিপ ও স্ত্রীর নামে একটি জিপ গাড়ি।

এ ছাড়া ২০ একর কৃষি জমি ও ১৪৬ শতকের একটি পুকুর, নাল জমি ১০৪ শতক, স্ত্রীর নামে ১ দশমিক ২৩ একর জমি, নিজের নামে রাজধানী ঢাকায় পৃথক পাঁচটিসহ কুমিল্লার বজ্রপুর এলাকায় মোটি ৪১ শতক জমির কথা উল্লেখ করা হয়েছে স্থাবর সম্পত্তির তালিকায়। স্ত্রীর নামে কুমিল্লা ও রাজধানীতে থাকা ফ্ল্যাট ও দোকান এবং ভবন মিলিয়ে যে সম্পদের হিসাব তিনি দিয়েছেন, তাতে এবারের কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে সম্পদশালী।

সাক্কু সম্পদে এগিয়ে থাকলে আরেক বিএনপিপন্থী প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার এগিয়ে আছেন মামলা সংখ্যায়। তিনি স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র পদে প্রার্থী হয়েছেন। নিজাম উদ্দিন কায়সারের জন্ম ১৯৮২ সালের ৩১ অক্টোবর। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম। তাঁর বিরুদ্ধে বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা রয়েছে আটটি। আর খালাস পেয়েছেন চারটি মামলা থেকে। দ্রুতবিচার আইনের একটি মামলার কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। বার্ষিক আয়ের উৎস দেখানো হয়েছে, চাকরি থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর অন্যান্য উৎস থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৪ হাজার ৬২৭ টাকা। নগদ আছে ৩৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ টাকা। ব্যাংকে জমার পরিমাণ ৩ লাখ ২ হাজার ৪৯৭ টাকা। বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে আয় ৪০ হাজার টাকা। নিজের ৩০ তোলা ও স্ত্রীর ২০ তোলা স্বর্ণ আছে।

এবারের নির্বাচনে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান মেয়র পদপ্রার্থী হয়েছেন। হলফনামায় তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বিএসএস পাসের কথা উল্লেখ করেছেন। হলফনামা অনুসারে, তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৬ ও ২০১৯ সালের পৃথক দুটি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। তিনি অতীতে দুটি ফৌজদারি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। এ ছাড়া একটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে সাজার আদেশ হাইকোর্টে স্থগিত আছে। কৃষি, ব্যবসা ও অন্যান্য খাত থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার বেশি। আর তাঁর স্ত্রীর বার্ষিক আয় ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ টাকা আছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪২ টাকা, ব্যাংকে জমা ৩ লাখ ১৭ হাজার ২৫৮ টাকা। স্ত্রী নামে নগদ ও ব্যাংকে আছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যানবাহনের মধ্যে আছে নিজের একটি জিপ, স্ত্রীর একটি ব্যক্তিগত গাড়ি।

কুসিক নির্বাচন সম্পর্কিত খবর জানতে - এখানে ক্লিক করুন

অন্য দুই প্রার্থীর মধ্যে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি তাঁর জন্ম। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। নগদ টাকা আছে ৫০ হাজার, আর ব্যাংকে আছে ২ লাখ ৪২৮ টাকা। অকৃষি জমি আছে ৮ দশমিক ২৫ শতক। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল জানিয়েছেন, ১৯৫৮ সালের ২১ জুন জন্ম নেওয়া বাবুলের ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নগদ টাকা আছে ৩ লাখ ৫০ হাজার। আর ব্যাংকে আছে ৫ হাজার টাকা। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা আছে।

কুসিক নির্বাচন ২০২২ সম্পর্কিত পড়ুন:

তিতাসে শাশুড়িকে চুবিয়ে হত্যায় জামাতা গ্রেপ্তার

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

কুয়েতে কুমিল্লার যুবকের মৃত্যু, পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা

আমাদের বিরোধিতা যারা করে, তারা রাতে গোমতী নদীতে মাটি কাটায়, দিনে ঘুমায়: হাসনাত আবদুল্লাহ

মেয়ে দেখা মানে বিয়ে ফাইনাল না: মনোনয়ন প্রসঙ্গে হাজি ইয়াছিন

হোমনা থানায় হেফাজতে থাকা এক নারী আসামির মরদেহ উদ্ধার

হাসনাত আবদুল্লাহর নির্বাচনী প্রচারণা সভা থেকে সন্দেহভাজন দুই যুবক আটক

ভিক্ষুকের টাকা ছিনতাই করার অভিযোগে একজন আটক

চৌদ্দগ্রাম পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার

বন্ধুদের সঙ্গে বান্দরবান যাওয়ার পথে প্রাণ গেল যুবকের