এক দিনের ব্যবধানে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর আগে গত সোমবারও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
টানা শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে জেলার খেটে খাওয়া মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ভোর থেকেই উত্তরের হিমেল বাতাস ও কুয়াশার ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে গেছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ, দিনমজুর, ইটভাটার শ্রমিক, সবজি বিক্রেতা ও গৃহিণীরা শীতের কারণে কষ্টে রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, বুধবার সকাল ৬টায় ১০ দশমিক ৬ এবং ৯টায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। তিনি জানান, আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং মাসের শেষের দিকে বা নতুন বছরের শুরুতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এদিকে সকাল থেকেই তীব্র শীতে কর্মজীবী মানুষ বিপাকে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন তাঁরা, যাঁদের জীবিকার তাগিদে খুব ভোরে ঘর থেকে বের হতে হয়। পেশাভেদে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে তাঁদের যন্ত্রণার চিত্র।
ভ্যানচালক জমির আলী বলেন, ‘বাপু, হাত-পা তো থরথর করি কাঁপে। ভ্যানের হাতল ধরি রাখা যায় না, বরফের মতো ঠান্ডা লাগে। পেটের দায়ে তা-ও বাইর হওয়া লাগে, কিন্তু রাস্তায় মানুষ কম থাকায় ভাড়াও ঠিকমতো পাইতাছি না।’
গৃহিণী রায়েবা খাতুন বলেন, ‘ভোরে উঠে বরফসমান পানি দিয়ে থালাবাসন ধোয়া আর রান্নাবান্না করা যে কী কষ্ট! ঘরে ছোট বাচ্চা আর বয়স্ক মানুষ আছে, তাদের ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে হিমশিম খাচ্ছি।’
দিনমজুর শাহেদ আলী বলেন, ‘আমরা তো কামলা মানুষ, এক দিন কাজ না করলে চুলা জ্বলে না। কিন্তু শীত আর কুয়াশার কারণে কাম কম। শীতে শরীর চলে না, তা-ও ফাঁকা পেটে কাজের আশায় মোড়ে বইসা থাকি।’
ইটভাটার শ্রমিক বিপুল হোসেন বলেন, ‘ভোররাত থিকা কাজ শুরু করা লাগে। আগুনের পাশে থাকলেও পিঠ দিয়া কনকনে বাতাস ঢুকে। হাত-পা শীতে জড়সড় হইয়া যায়, ইটের কাজ করতে গেলে আঙুলগুলা অবশ লাগে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীত থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। ধানের বীজতলার ওপর জমে থাকা কুয়াশার পানি সকালে দড়ি টেনে ফেলে দিতে হবে। প্রয়োজনে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে এবং ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। শাকসবজির ক্ষেত্রে বালাইনাশক স্প্রে করার পাশাপাশি চারার গোড়ায় পরিমিত পানি সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, শীতজনিত কারণে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। হাসপাতালে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ শিশু ও ২০০-৩০০ বয়োবৃদ্ধ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, শীতার্ত মানুষের পাশে জেলা প্রশাসন তৎপর। ইতিমধ্যে জেলাজুড়ে শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তিনি সমাজের বিত্তবানদেরও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।