চট্টগ্রামে পাঁচ বছরের শিশু আয়াতকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িত আবির আলীকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
আজ সোমবার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আব্দুল হালিমের আদালত তাঁর রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পিবিআই পরিদর্শক ইলিয়াস খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশুটির মরদেহের খণ্ডাংশের খোঁজ এখনো মেলেনি। তাই আসামির ফের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।’
এদিকে দুদিনের রিমান্ড শেষে আজ সোমবার দুপুরে আবিরকে আদালতে তোলার সময় তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। তাকে বহনকারী পিবিআইয়ের গাড়ি ২০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখে জনতা। পরে দায়িত্বরত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত জনতার কাছ থেকে ছাড়িয়ে আদালতের হাজতখানায় রাখেন।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তেজিত জনতাকে আসামিকে আদালত প্রাঙ্গণে ঘিরে ধরে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ভিডিওতে ফাঁসির দাবিতে স্লোগানও দিতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মহানগর আদালতের কোর্ট পরিদর্শক আতিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসামিকে আদালতে নেওয়ার পথে সামান্য হট্টগোল তৈরি হয়েছিল। পরে তা ঠিক হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজিত জনতা মিছিল করেছিল। মিছিলে নিহতের পরিবারের লোকজনের পাশাপাশি এলাকার কিছু লোকজন ছিল। এ ছাড়া সেখানে আদালতে আসা উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। ওই মুহূর্তে আসামিকে আদালতে নেওয়ার পথে ভিড়ের মধ্যে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল। তেমন বড় কিছু হয়নি।’
আতিকুর আরও বলেন বলেন, ‘মানুষের মধ্যে বিভৎসভাবে শিশু হত্যার এই ঘটনাটি নিয়ে আবেগ আছে। তাই আসামিকে দেখে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল।’
গত ১৫ নভেম্বর নগরীর ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিসের সামনে থেকে নিখোঁজ হয় শিশু আয়াত। শিশুটি তাঁর বাসা থেকে বেরিয়ে স্থানীয় মক্তবে পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয়। ওই ঘটনায় শিশুটির বাবা সোহেল ইপিজেড থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। শিশু আয়াতের নিখোঁজের বিষয়ে পিবিআই তদন্ত করে আবির আলীর সম্পৃক্ততা পায়। আবির শিশু আয়াতের পরিবারের মালিকানাধীন বাসার ভাড়াটিয়া।
এর আগে পিবিআই বলছে, শিশুটিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করাই উদ্দেশ্য ছিল অভিযুক্ত যুবকের। কিন্তু ঘটনার দিন তাঁর মোবাইলে থাকা সিমটি কাজ না করায় সে শিশুটির পরিবারকে ফোন দিতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে শিশুটি চিৎকার শুরু করলে। পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালে ভাড়া বাসাতেই শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
এরপর শিশুটির লাশ একটি ব্যাগে ভরে আবের তাঁদের ইপিজেডের পুরোনো ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে সুযোগ বুঝে বাথরুমে আয়াতের লাশটি ছয় খণ্ড করে আলাদা ৬টি প্যাকেটে ভরা হয়। পরদিন ১৭ নভেম্বর তিনটি প্যাকেট ২০ ফুট গভীর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন নালায় ও বাকি তিনটি প্যাকেট প্যাকেট সাগরে ফেলে আসে আবির আলী। এই তথ্য পেয়ে শুক্রবার পিবিআই শিশুটির খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধারে নামে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ওই শিশুটির দেহাবশেষের কোনো কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি।