তখন সমাবেশ শুরু হয়নি। সবেমাত্র উপস্থিত হচ্ছিলেন নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে যোগ দেন সাবেক সাংসদ ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম। এ সময় তাঁকে প্রথম দফায় পেছন দিক দিয়ে ধাক্কা দিয়ে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন নিজ দলেরই নেতা-কর্মীরা। বক্তব্য দেওয়ার সময় দ্বিতীয় দফায় লাঞ্ছিত করা হয় তাঁকে। সমাবেশ শেষে মারধর থেকে বাঁচতে ‘দৌড়ে’ উঠে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর গাড়িতে।
আজ বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে নগরের কর্ণফুলী থানার সিডিএ আবাসিক এলাকা মাঠে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এ ঘটনা ঘটে।
শুধু সরোয়ার জামাল নিজাম নন, একইভাবে লাঞ্ছিত হন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য গাজী শাহজাহান জুয়েলও। তাঁদের মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লায়ন হেলাল উদ্দিন ও ছাত্রদলের সভাপতি শহীদুল আলম শহীদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদলের সভাপতি শহীদুল আলম শহীদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরাই তাঁকে (সরোয়ার জামাল নিজাম) লাঞ্ছিত করেছে। কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রামে নেই।’ তবে গাজী শাহজাহান জুয়েলকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগটি অস্বীকার করেন তিনি।
গাজী শাহজাহান জুয়েলও নিজে লাঞ্ছিত হননি দাবি করে বলেন, ‘আমার সঙ্গে ঝামেলাটা হয়েছে সরোয়ার জামাল নিজামকে নিয়ে। আমরা সরকার পতনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ আছি।’
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, সামন্য একটু ঝামেলা হয়েছে। বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে আবারও চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে ভেঙে পড়ে যান বিএনপি নেতারা। পরে ভাঙা মঞ্চে দাঁড়িয়েই বক্তব্য শেষ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ বুধবার বেলা সোয়া ১টার দিকে নগরের কর্ণফুলী থানার সিডিএ আবাসিক এলাকা মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর বাকলিয়ার কালামিয়া বাজার এলাকার কেবি কনভেনশন হলের সামনে কেন্দ্র ঘোষিত বিভাগীয় সমাবেশ করে নগর বিএনপি। ওই সময়ও মঞ্চ ভেঙে পড়ে যান বিএনপি নেতারা। গত দুই মাসে বড় দুটি সমাবেশে মঞ্চ ভাঙার ঘটনা ঘটল।
মঞ্চ ভাঙার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত মঞ্চে প্রথম সারির নেতারা থাকেন। কিন্তু প্রত্যেকটা বড় সমাবেশে থানা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও মঞ্চের সামনে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ জন্য বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা মঞ্চে উঠতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামেন। ফলে ভার সইতে না পেরে ভেঙে যায় মঞ্চ।
বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশ বেলা ১১টার দিকে শুরু হয়। এ উপলক্ষে সকাল থেকেই বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় ক্রসিং থেকে মইজ্জারটেক সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সেই বিক্ষোভ শেষে সমাবেশে যোগ দেন নেতা-কর্মীরা। পরে নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ মঞ্চটি ভেঙে পড়ে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বেগম জিয়া খুবই অসুস্থ। তিনি সুচিকিৎসার অভাবে দিন দিন মৃত্যুর সম্মুখীন হচ্ছেন। সরকারের উচিত দ্রুত তাঁকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো। তা না হলে দেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
আমীর খসরু আরও বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না, মুক্তি করে আনব। সরকার বেগম জিয়াকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। দেশের জনগণ সরকারের এই ষড়যন্ত্র রুখে দেবে। অনতিবিলম্বে আমরা বেগম জিয়ার মুক্তি ও তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা চাই। অবৈধ সরকারের সাজানো নাটকের অবসান ঘটবে শিগগিরই।’
এ সময় তিনি গণ-আন্দোলনের আগে বেগম জিয়া, তারেক রহমানসহ সকল বিএনপি নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।