মৌসুম শুরু হলেও চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। দিন-রাতে নদী চষে বেড়ালেও জেলেদের নৌকার জ্বালানি খরচই উঠছে না। তাতে নদী উপকূলীয় আড়তগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে ভরা মৌসুমে ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানাল মৎস্য বিভাগ।
ঈদুল আজহা-পরবর্তী সময়ে জেলা সদরের মেঘনা উপকূলীয় জেলেপল্লি ও আড়তগুলো ঘুরে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
জেলা মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, পদ্মা-মেঘনা নদীর চাঁদপুর নৌসীমানার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৪৪ হাজার জেলে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। বছরে দুবার জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণের সময় তাঁদের প্রণোদনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া এসব জেলের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়।
সদর উপজেলার হরিণা ও আখনেরহাট মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ ইলিশের আড়ত বন্ধ। ইলিশের আমদানি না থাকায় অনেক আড়তে ব্যবসায়ীরা অবসর সময় কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ আড়তেই ঘুমিয়ে সময় পার করছেন।
হরিণা মাছঘাটের ব্যবসায়ী নেছার সৈয়াল বলেন, ‘নদীতে এখন মাছ কম, যে কারণে ব্যবসায়ীরা অনেকেই অবসর সময় কাটাচ্ছেন। তবে নদীতে পানি বাড়লে ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাকি আল্লাহর ইচ্ছা।’
আখনের হাটের আড়তদার শহীদ সরদার বলেন, ‘ইলিশের আমদানি না থাকায় ১১ আড়তের ছয়টি বন্ধ। সঠিকভাবে জাটকা সংরক্ষণ না হওয়ায় নদীতে ইলিশ কমেছে। আবার জেলেরা নদীতে নামলে জালের প্রকারভেদ নিয়ে নৌ পুলিশের হয়রানি তো আছেই।’
সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের জেলে জাকির হোসেন বলেন, নৌকায় তিনিসহ পাঁচজন জেলে রয়েছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেঘনায় ইলিশ ধরতে জাল ফেলেন। দুপুরে ফিরেছেন হরিণাঘাট আড়তে। ছোট-বড় ছয়টি ইলিশ বিক্রি করে পেয়েছেন ১ হাজার টাকা। তাতে তাঁদের জ্বালানি খরচও ওঠে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সদরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে আমরা বছরজুড়ে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছি। বিশেষ করে জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় জেলেদের সচেতন করা হচ্ছে। এ বছর জাটকা সংরক্ষণ সফল হয়েছে। আগামী মৌসুমে এর সুফল মিলবে। তার পরও নদীতে চর জেগে ওঠা, নদীর পানি দূষণ ও ইলিশের খাদ্য হ্রাস পাওয়ায় মিঠাপানিতে ইলিশের বিচরণ কম। তবে ভরা মৌসুমে ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’