টানা চার দিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া মাতামুহুরি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সোমবার সন্ধ্যায় ৬টায় নদীতে পানি ৬ দশমিক ৫৩ সেন্টিমিটার অর্থাৎ বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
নদীর পানিতে উপজেলার ১৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাহার ধসে দুই শিশু নিহত ও ঢলের পানিতে এক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। এ ছাড়া চকরিয়া পৌর শহরের নিম্নাঞ্চল, সড়ক ও ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলায় টানা চার দিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন ইউনিয়নের ২৫টি সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাতামুহুরি নদীর ৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। পৌরসভার ভাঙারমুখ, আমাইন্যারচর, নামার চিরিংগা ও কোনাখালীর পুরুইত্যাখালী, মরংঘোনা এলাকায় মাতামুহুরি নদীর তীর উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৭টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, ফাঁসিয়াখালী, লক্ষ্যারচর, বমুবিলছড়ি, চিরিংগা, পশ্চিম বড়ভেওলা, পূর্ব বড় ভেওলা, কোনাখালী, ভেওলা মানিকচর (বিএমচর), সাহারবিল, হারবাং, বরইতলী, বদরখালী, ঢেমুশিয়া, ডুলাহাজারা ও কৈয়ারবিল।
হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক কাইছার হামিদ বলেন, ‘অতি বৃষ্টির কারণে পাহার ধসে নিহত হয়েছে বরইতলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সবুজপাড়া গ্রামের নাজিম উদ্দিনের দুই সন্তান পাঁচ বছর বয়সী মোহাম্মদ সাবিদ ও এক বছর বয়সী তাবাসছুম।’
লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মো. আওরঙ্গজেব বুলেট বলেন, ‘মাতামুহুরি নদীতে লাকড়ি সংগ্রহ করার সময় নদীতে স্রোতে ভেসে গিয়ে ইউনিয়নের ছিকলঘাট হাজীপাড়ার মৃত জাকির হোসেনের ছেলে শাহ আলম নিখোঁজ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাতামুহুরি নদীর বিপৎসীমা ধরা হয় ৫ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার। আজ সোমবার সন্ধ্যায় ৬টায় নদীতে পানি প্রবাহিত হয়েছে ৬ দশমিক ৫৩ সেন্টিমিটার অর্থাৎ বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।’
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে পুরো উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। গতবারের তুলনায় এবারে পানি একটু বেশি। ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৭টি ইউনিয়নে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বরইতলী ইউনিয়নের বাড়ির দেয়াল ধসে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।’