হোম > সারা দেশ > চট্টগ্রাম

যখন বুঝতে পেরেছি, তখন সবকিছু শেষ: ট্রেন চালক

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম

সাধারণত রেললাইন পার হতে দেখেশুনে পার হতে হয়। কিন্তু মাইক্রোবাসটি এত স্পিডে ঢুকছে ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে লাগার পর বুঝতে পারছি, কিছু ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন কন্ট্রোলে নিয়ে আসি। তখন অবশ্য সবকিছু শেষ—এভাবেই গতকালের ট্রেন ও পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন মহানগর প্রভাতী ট্রেনের মূল চালক (লোকোমাস্টার) জহিরুল হক খান।

গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় বড় তাকিয়া স্টেশন এলাকায় মহানগর প্রভাতী ট্রেন ও পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জন নিহত হয়েছে। এরই মধ্যে মরদেহগুলো পরিবারের সদস্যদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ। 

শুক্রবার রাতে আজকের পত্রিকাকে ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার বর্ণনা করেন লোকোমাস্টার জহিরুল হক খান। তিনি জানান, লেভেল ক্রসিংয়ের আগে গাছের জন্য বার (ব্যারিয়ার) ফেলা ছিল কি না দেখা যায়নি। ক্রসিংয়ে যখন ট্রেন, তখন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মাইক্রোবাসটি চলে আসে। ট্রেনও স্পিড থাকায় ওই মুহূর্তে আর কিছু করার ছিল না। 

ঘটনার বর্ণনার সময় আঁতকে উঠে জহিরুল হক খান বলেন, ‘সাধারণত রেললাইন পার হতে দেখেশুনে পার হতে হয়। কিন্তু মাইক্রোবাসটি এত স্পিডে ঢুকছে যে ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে লাগার পর বুঝতে পারছি, কিছু ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন কন্ট্রোলে নিয়ে আসি। তখন অবশ্য সবকিছু শেষ।’ 

গেটম্যান থাকলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না উল্লেখ করে জহিরুল খান বলেন, ‘ওই লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকলে মাইক্রোবাসটি ঢুকতে পারতনা। যদি গেটম্যান থাকত তাহলে বার পড়ত। আর বার পড়লে গাড়ি কীভাবে রেললাইনে ঢুকবে।’ 

প্রত্যক্ষদর্শীরাও শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছে, ঘটনার সময় ছিলেন না গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন। এমনকি বারও ফেলানো অবস্থায় ছিল না। তাই মাইক্রোবাসটি রেললাইনে উঠে যায়। যেহেতু পর্যটকবাহী মাইক্রোবাস স্বাভাবিকভাবেই গাড়ির ভেতর পর্যটকেরা আনন্দ করে, গান করে। সে কারণে গাড়ির চালকও বুঝতে পারেননি ট্রেন আসছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ে সিগন্যাল থাকে। কিন্তু মিরসরাই বড়তাকিয়া স্টেশনের খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় ওই ক্রসিংটিতে কোনো সিগন্যালের সিস্টেম ছিল না। সাধারণত কোনো ট্রেন কাছাকাছি আসলে সিগন্যালের লালবাতি জ্বলে উঠে এবং সাইরেন বাঁজতে থাকে। এতে লেভেল ক্রসিংয়ের আশপাশের লোকজন সতর্ক হয়ে যান। 

ট্রেন চালক জহিরুল হক খান বলেন, ‘আমিও সেখানে কোনো সিগন্যাল দেখিনি। ফলে গাড়িটি এত কাছাকাছি চলে আসছে ট্রেন থামানো যায়নি। সাধারণত একটি ট্রেন থামাতে হলে ৪০০ গজ পর্যন্ত দূরত্ব থাকতে হয়। তবুও আমি হার্ড কপি ব্রেক করছি, ইঞ্জিনের পাওয়ারও কমায় দিয়েছি কিন্তু এর আগেই ইঞ্জিনে উঠে যায় মাইক্রোবাসটি।’ 

আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘ট্রেন থেকে নেমে লাশের সারি দেখে নিজেকে মেনে নিতে পারিনি। তরুণ ছেলেরা এভাবে লাশ হবে কোনো মা-বাবাই মেনে নিতে পারে না। আমারও সন্তান আছে, বুঝি সন্তানরা যে কতো আদরের।’ 

চট্টগ্রামের বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিএন-১) মো. হাসান মুকুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিয়ম আছে রেললাইন পার হতে হলে ডানে-বামে দেখে পার হতে হয়। একটু যদি সতর্ক হতো তাহলে এত বড় ঘটনা ঘটতো না। 

আরও পড়ুন:

গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার থানায় সেলফি: অব্যাহতির খবর পেয়ে কনস্টেবল অসুস্থ

চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, আটক ১২

হান্নান মাসউদকে ফেসবুকে হুমকি

হাদির মৃত্যুর খবরে নওফেলের বাসায় অগ্নিসংযোগ, ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ

বাহিনী নির্মূলে প্রয়োজনে চরমপন্থা অবলম্বন করতেও দ্বিধা করব না: সিএমপি কমিশনার

বিএনপির প্রার্থীকে জামায়াত মনোনীত উল্লেখ নির্বাচন কর্মকর্তার ছকে

ঘুমে পুলিশ, থানায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতার সেলফি

কুমিল্লায় বাস ধর্মঘটে অচল গণপরিবহন, চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা

কার্ডিকন চট্টগ্রাম-২০২৫: দেশীয় চিকিৎসার ওপর আস্থা তৈরির তাগিদ

থানচিতে ভিডব্লিউবি কর্মসূচি: সরকারি সঞ্চয়ের টাকা পাচ্ছেন না ১২০০ নারী