গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কবলে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সাগরে আট শ্রমিকসহ একটি ড্রেজার ডুবির ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ আটজন শ্রমিকের সবার বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলায়। এই খবর পাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারে মাতম শুরু হয়ে গেছে।
এ দিকে আজ মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় ২২ ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ডুবুরি দল। বাকি সাতজন এখনো নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে।
ড্রেজার ডুবিতে নিখোঁজ শ্রমিকেরা হলেন—সদর উপজেলার চর জৈনকাঠি গ্রামের মোল্লা বাড়ির আ. রহমানের ছেলে মো. তারেক মোল্লা, আনিচ মোল্লার দুই ছেলে শাহীন মোল্লা ও ইমাম মোল্লা এবং আব্দুল হক মোল্লার ছেলে মাহমুদ মোল্লা, ইউসুফ হাওলাদারের ছেলে মো. বসার হাওলাদার, নুরু সর্দারের ছেলে মো. আলম সর্দার, সেকান্দার রারির ছেলে মো. জাহিদ রারি এবং ফকির বাড়ির রহমান ফকিরের ছেলে মো. আল-আমিন ফকির। এদের মধ্যে সেকান্দার রারির ছেলে মো. জাহিদ রারির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নের চর জৈনকাঠি গ্রাম যেন শোকে ছেয়ে গেছে। নিখোঁজ শ্রমিকদের বাড়িতে চলছে মাতম। কেউ বা সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। আবার কেউ স্বামীকে হারানোর সংবাদে আহাজারি করছেন। নিখোঁজ সন্তানের চিন্তায় বাবা-মায়ের আর্তনাদে ভারী হয়ে পড়েছে গ্রামের বাতাস। বাবা হারানো সন্তানদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও খুঁজে পাচ্ছেন না প্রতিবেশীরা। ভবিষ্যতের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে দরিদ্র পরিবারগুলো।
স্বামী শাহিন মোল্লাকে হারিয়ে পাগলপ্রায় স্ত্রী খাদিজা বেগম। তিনি বিলাপ করছেন, ‘আমার চার সন্তানকে কে দেখবে, কে খাওয়াবে!’
এ সময় নিখোঁজ দুই শ্রমিকের বাবা আনিচ মোল্লা বলেন, ‘আমাদের বাড়ির ৪ ছেলে নিখোঁজ। এর মধ্যে আমার দুই ছেলে। ওরা গত ১ মাস আগে ড্রেজারে চুক্তিতে কাজ করতে গেছে। গতকাল যখন বন্যা শুরু হইছে, তহন আমাগো লগে ফোন দিয়া কথা কইছে। এর কতক্ষণ পর থেইকা ফোন বন্ধ। আমি কিছু চাই না, আমার পোলা দুইডার লাশ চাই। আমার পুত আমার কাছে ফিরাইয়া দেন।’
নিখোঁজ শ্রমিক মো. তারেক মোল্লার বাবা আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমার বুকটা খালি হইয়া গেছে। কে খাওয়াইবে আমাগো, আমাগো ঘরের একমাত্র ইনকাম করত আমাগো তারেক। আমার তারেকের লাশটা এহন আইন্না দেন।’