হোম > প্রযুক্তি

স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বিষয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা ও জবাব

ফাইল ছবি

দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। শুরুতে স্টারলিংক দুটি প্যাকেজ দিয়ে শুরু করছে— স্টারলিংক রেসিডেন্স ও রেসিডেন্স লাইট। মাসিক খরচ একটিতে ৬ হাজার টাকা, অপরটিতে চার হাজার ২০০ টাকা। সেট-আপ যন্ত্রপাতির জন্য এককালীন খরচ হবে ৪৭ হাজার টাকা।

তবে বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা দিতে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু হওয়াতে এ সম্পর্কে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ সম্পর্কিত নানা জিজ্ঞাসা ও তার জবাব দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। নিচে প্রশ্ন ও জবাবগুলো তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: স্টারলিংকের কি ডেটা লিমিট আছে?

উত্তর: স্টারলিংকের কোনো ডেটা লিমিট নেই বলে নিশ্চিত করা হয়েছে বিবৃতিতে।

প্রশ্ন: স্টারলিংক সত্যিকার অর্থে সরকার কাদের জন্য করেছে? এর সেবাগ্রহীতা কারা?

উত্তর: দেশের প্রত্যন্ত ও দূরবর্তী অঞ্চল— যেমন পার্বত্য অঞ্চল, হাওরাঞ্চল কিংবা বনাঞ্চলের মতো জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে স্টারলিংক ব্যবহার করা হবে। সারা দেশের যেকোনো স্থান থেকেই এই সেবা ব্যবহার করা যাবে।

বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখনো ফাইবার পৌঁছায়নি। সেসব জায়গায় মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে সেবাদান করা হয়, যেটির সক্ষমতা কম। এ সমস্যা সমাধানে স্টারলিংকের একটা সেট-আপ বক্স কিনে গ্রামের মানুষও লো লেটেন্সি এবং উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।

এতে সংসদ ভবনে কিংবা উপদেষ্টার বাসভবন বা তার অফিসে যেই স্পিডে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয, ঠিক একই স্পিডে ওইসব অঞ্চলেও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

প্রশ্ন: স্টারলিংক কি উদ্যোক্তা বান্ধব? উদ্যোক্তারা ইন্টারনেট সেবা প্রদানে কীভাবে স্টারলিংক ব্যবহার করতে পারবেন?

উত্তর: স্টারলিংক উদ্যোক্তা বান্ধব হবে। এটির দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় একজন না পারলে কয়েকজন মিলে একটি সেট-আপ বক্স কিনে একসঙ্গে কয়েকজন ব্যবহার করতে পারবে। এটির ওয়াইফাই রেঞ্জ আনুমানিক, আনুমানিক ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ মিটার। এই জোনের মধ্যে যেসব উদ্যোক্তা থাকবেন, তারা সবাই মিলে তহবিল গঠন করে ৪৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি সেট-আপবক্স কিনে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।

এ নিয়ে আইনে কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়নি বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া, শহরের বাসভবনে ওয়াইফাই শেয়ারিং করেও ইন্টারন্টে ব্যবহার সম্ভব হবে। স্টারলিংকে যেহেতু বিল্টইন রাউটার আছে, তাই রাউটার থেকে রাউটারে আইএসপি সেটাপেও ব্যবহার সম্ভব।

পাশাপাশি মাইক্রোক্রেডিট অথোরিটি (এমআর) কিংবা ফাইন্যান্সিয়াল অর্গানাইজেশন কিংবা ব্যাংক থেকে সেট-আপ বক্স কেনার জন্য উদ্যোক্তাদের অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দিয়েছে সরকার।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নাগরিক সেবার যারা উদ্যোক্তা হবেন, তাদের জন্য সহজে স্টারলিংক নেওয়ার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল প্যাকেজ তৈরিরও পরিকল্পনা করছে সরকার।

তাছাড়া, স্টারলিংকের মূল্য কিছুটা বেশি বলে স্বীকার করে সরকার জানিয়েছে, দাম বেশি থাকার কারণে এটি শেয়ার করে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ রাখা হয়নি।

এটি ব্যবহার করে ব্যবসা মডেল তৈরির পাশাপাশি কেউ যদি এই স্টারলিংক ব্যবহার করে তা ইন্টারনেট নিয়ে (মোবিলিটি এবং রোমিং সুবিধা ছাড়া) সেটাকে ফিড করে যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেক্ষেত্রেও কোনো বাধা নেই।

এ ছাড়াও ড. ইউনূসের ফোন লেডি ধারণার কথা উল্লেখ করে জানানো হয়, যেকোনো ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফআই) বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) বা অন্য কোম্পানিগুলো বা ফাইন্যান্সিয়াল অর্গানাইজেশনগুলো চাইলে ওয়াইফাই লেডি হিসেবে নতুন একটি উদ্যোক্তার ধারা সৃষ্টি করতে পারে। তারা চাইলে শুধুমাত্র গ্রামীণ মহিলাদেরকে একটা বিশেষ ঋণ দিতে পারে যার মাধ্যমে তারা স্টারলিংক নিয়ে ইন্টারনেট সেবা বিক্রয় করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভবন ছাড়াও ইনফরমাল কো-ওয়েবিং বিজনেসের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারবেন।

প্রশ্ন: স্টারলিংকের মাধ্যমে জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হবে কী?

উত্তর: স্টারলিংকের একটি লোকাল গেটওয়ে থাকবে। এর কমার্শিয়াল টেস্ট রান ও গ্রাউন্ড টেস্ট চলমান। এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য স্টারলিংক কোম্পানিকে ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে, ইতোমধ্যে ১০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। ৯০ দিনের সময়সীমা পার হলেই তাদের লোকাল গেইটওয়ে বাধ্যতামূলক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। ফলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি ডিভাইসের ক্ষেত্রে রেট, ভ্যাট, ট্যাক্স থাকায় এনওসি (বিভাগীয় অনাপত্তি সনদ) নেওয়া হবে।

প্রশ্ন: চলমান চীন-মার্কিন বাণিজ্য দ্বন্দ্বের মধ্যে স্টারলিংকের ব্যবহারে অনুমতি প্রদানে কোনো প্রভাব পড়বে কী ?

উত্তর: চলমান পরিস্থিতিতে এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের ভাষ্যে, বাংলাদেশ যোগাযোগ প্রযুক্তির বিচারে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়।

বাংলাদেশে ৪জি বা ৫জি টেকনলোজিতে সর্বাধুনিক নেটওয়ার্ক ও ব্যাকবোন স্থাপনে চীনা প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া বিটিসিএল, টেলিটক সংস্থার অধীন চীনা অর্থায়নে ও প্রকৌশলীদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে।

চীন কিংবা মার্কিন ব্যবসায়ীরা স্বাধীনভাবে যেন বাংলাদেশে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে উন্মুক্তভাবে ব্যবসা করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে চায় সরকার। সব দেশকেই একইরকম সুবিধা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ।

প্রশ্ন: আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংক এর দাম কী সহনীয়?

উত্তর: একটি ভবনের কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাটের সদস্যরা মিলিতভাবে এই সেবাটি কিনে থাকে তাহলে উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের জন্য বিষয়টি সহজ হবে। এতে এককালীন দামটা বেশি হলেও বা সেট-আপব্যয়টা বেশি হলেও সবার মধ্যে সরবরাহ হয়ে যাওয়ার পর আর খরচ বেশি মনে হবেনা বলে মনে করে সরকার।

প্রশ্ন: রিজিওনাল প্রাইস বিবেচনায় স্টারলিংকের ব্যয় কী বাংলাদেশে বেশি?

উত্তর: রিজিওনাল প্রাইস বিশ্লেষন করে বাংলাদেশে স্টারলিংকের দাম সবচেয়ে কম বলে জানিয়েছে সরকার। এমনকি শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, থাইল্যান্ডের চেয়েও কম এই দাম।

প্রশ্ন: সরকারি কোম্পানির স্বার্থ কিভাবে রাখা হচ্ছে?

উত্তর: বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দুইভাবে সরকারি কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রথমত, সাবমেরিন কেবল কোম্পানির মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়ত স্যাটেলাইট কোম্পানির মাধ্যমে।

আরও খবর পড়ুন:

চর্চা ‘লার্নিং থ্রো প্র্যাকটিস’ধারণাকে প্রাধান্য দেয়

মিরর ব্যাকটেরিয়া কি আধুনিক পৃথিবীর নতুন মারণাস্ত্র

অনলাইনে কেনাকাটার নিরাপদ উপায়

গুগলের নতুন ফিচার: সাধারণ হেডফোনই হবে রিয়েল–টাইম অনুবাদক

ডিজিটাল উদ্যোক্তা প্রকল্প: পাঁচ বছরে অর্ধেক কাজ, ব্যয় বাড়ল ১৭৮ কোটি

যুক্তরাষ্ট্রে মাকে হত্যার পর ছেলের আত্মহত্যা, চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিবারের

মিসড কল মেসেজ ও ছবি থেকে অ্যানিমেশনসহ যেসব ফিচার আনল হোয়াটসঅ্যাপ

অস্ট্রেলিয়ায় ২ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ: ‘এটা কাজ করছে না ব্রো’— প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ জেন-জি’দের

সকালে ঘুম ভেঙে অস্ট্রেলিয়ার লাখো শিশু দেখবে তাদের ‘আইডি’ উধাও

ভারতে ১৭.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে মাইক্রোসফট