ক্রিকেট নিয়ে গত দুই দশকে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা অনেক বাড়লেও ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে নব্বইয়ের দশকে গেলে দেখা যাবে ভিন্ন চিত্র। ফুটবল নিয়ে জনপ্রিয়তা এত তুঙ্গে ছিল যে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে থাকতে হতো তটস্থ।
কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের ফুটবলে নিয়ে তুমুল উন্মাদনায় নেমেছিল ধস। তবে হামজা চৌধুরী, শমিত শোমদের মতো প্রবাসী ফুটবলারদের আগমনে গত কয়েক মাসে দেশের ফুটবলে জোয়ার উঠেছে। যে উন্মাদনা এখন বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের, সেটা কেবল জাতীয় দলকে ঘিরেই। বাংলাদেশ-ভুটান, বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ-হংকং—ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে সাম্প্রতিক সময়ে এই তিনটি ম্যাচে গ্যালারিতে দর্শকদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। এমনকি হামজাদের ম্যাচ দেখতে গেট ভেঙে দর্শকদের স্টেডিয়ামে ঢোকার মতো ঘটনা ঘটেছে।
বিকেলে আজ ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তারা একটা প্রীতি ম্যাচ খেলেছেন। সেই ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া দাবি করেছেন, নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা তাঁরা ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। সাংবাদিকদের ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘আসলে ফুটবল যে পর্যায়ে ছিল, সেখান থেকে এক বছরে খুব বেশি যাচাই করার সুযোগ নেই। কারণ, এক বছর আগে আমরা কোথায় ছিলাম আর এক বছর পরে কোথায় আছি, সেটাই যদি আপনারা একটু পর্যালোচনা করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন। আসলে বাফুফে এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে ফুটবলে আমরা নব্বই দশকের উন্মাদনা, সেটা আমরা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এখন গ্যালারিভর্তি মানুষ থাকেন। বাইরেও থাকেন, ঢুকতে পারেন না এমন। দর্শকদের এই ভালোবাসা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।’
জাতীয় স্টেডিয়ামে ৯ অক্টোবর ১৩ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে অসাধারণ এক ক্রসে বাংলাদেশকে শুরুতেই লিড এনে দিয়েছিলেন হামজা। তাঁর এই গোলের পর গ্যালারিতে দেখা গিয়েছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। কিন্তু এএফসি এশিয়ান বাছাইপর্বের তৃতীয় রাউন্ডের এই ম্যাচে হংকং দ্রুত তিন গোল দিয়ে বসলে ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। শেষ দিকে শেখ মোরসালিন, শমিত শোমের গোলে সমতায় ফিরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অন্তিম মুহূর্তে রাফায়েল মার্কিস গোল করে ৪-৩ ব্যবধানে হেরে গিয়েছিল স্বাগতিকেরা।
আসিফ মাহমুদের মতে বাংলাদেশের ফুটবলে অনেক উন্নতি হলেও সাফল্য পেতে ধৈর্য ধরতে হবে। সাংবাদিকদের আজ যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘অবশ্যই খেলা অনেক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশে উইং থেকে ক্রস এটা আমরা দেখিনি আমাদের শৈশবের পরে। আবার নতুন করে দেখতে পাচ্ছি। আমাদের খেলার উন্নয়ন হয়েছে। তবে সাফল্য আসতে সময়ের প্রয়োজন।পৃথিবীতে যেসব দেশ ভালো ফুটবল খেলে, ১০-১৫-২০ বছর ধরে তাদের অবকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে। ফুটবলারদের উন্নত মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের তৃতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ ৪ ম্যাচ খেলে দুটি করে ম্যাচ ড্র করেছে ও হেরেছে। হামজা-শমিতদের পয়েন্ট ২। চার দলের মধ্যে পয়েন্ট টেবিলের তিনে অবস্থান করছে হাভিয়ের কাবরেরার বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপের মূল পর্বে আর খেলা হচ্ছে না হামজা-শমিতের দলের। সমান ৮ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের এক ও দুইয়ে হংকং ও সিঙ্গাপুর।