বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের চেয়ে বেশি সমীকরণ আর কোনো দলের সমর্থকদের মেলাতে হয় কি না কে জানে! ক্রিকেটে নিয়মিত সমীকরণের মারপ্যাঁচে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। ফুটবলও ব্যতিক্রম কিছু নয়। এশিয়ান কাপের মূল পর্বে যেতে কঠিন সমীকরণের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে হামজাদের। বাছাইপর্বে প্রথম তিন ম্যাচ খেলে সম্বল মাত্র ১ পয়েন্ট। গ্রুপে অবস্থানও সবচেয়ে তলানিতে।
এমন পরিস্থিতি থেকে ভারত (২), সিঙ্গাপুর (৫) ও হংকংকে (৭) টপকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল পর্বে যাওয়ার রাস্তাটা কঠিনই নয়, প্রায় অসম্ভবও বটে। তবু সমীকরণের মারপ্যাঁচ যেহেতু আছে, তখন আশা রাখতে ক্ষতি কি!
বাংলাদেশের সামনে এখন একটাই পথ—জিততে হবে বাকি ৩ ম্যাচে। চোখ রাখতে হবে বাকিদের পয়েন্ট খোয়ানোর দিকেও। ১৪ অক্টোবর হংকংয়ের বিপক্ষে ফিরতি লেগের ম্যাচে হারলেই নিতে হবে বিদায়। ড্র করলেও থাকবে না কোনো সম্ভাবনা। খেলোয়াড় তো বটেই, দর্শকদেরও তা মাথায় গেঁথে রাখতে হচ্ছে।
ঘরের মাঠে ৯ অক্টোবর হংকংয়ের কাছে ৪-৩ গোলে হারের পর অঙ্কটা জটিল হওয়াটা স্বাভাবিক। এবার সেই হংকংয়ের আতিথেয়তা নিতে হবে বাংলাদেশের। পরশু সেখানে পৌঁছে গতকাল প্রথম অনুশীলন করেন হামজা-শমিতরা। হংকংয়ের তাই পো স্পোর্টস গ্রাউন্ডে দেড় ঘণ্টার অনুশীলনে কৌশলগত দিক থেকে কোনো কাজ করেননি কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। ম্যাচের পরই দীর্ঘ ভ্রমণ করায় সতেজ থাকতে দলকে দিতে চেয়েছেন পর্যাপ্ত সময়।
কাল অনুশীলনের সময় ডিফেন্ডার তপু বর্মন বলেন, ‘১৪ তারিখের ম্যাচে আমরা সম্মিলিতভাবে ভালো পারফর্ম করতে চাই এবং জিততে চাই। জয় ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। আমরা সেভাবেই মাঠে নামব, সেভাবেই ম্যাচটা শেষ করতে চাই।’
চোটে পড়ায় হংকংয়ের বিপক্ষে তপু খেলবেন কি না, তা নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। শুরুর একাদশে না থাকলেও শেষের দিকে মাঠে নামেন তিনি। বলেছেন, ‘আমি এখন শতভাগ সুস্থ। ম্যাচ খেলার মতো আমার সম্ভাবনা ও সামর্থ্য—দুটোই হয়েছে।’
সাধারণত ম্যাচের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে স্বাগতিক দলের আতিথেয়তা পায় সফরকারী দল। আগেভাগে যাওয়ায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। মার্চে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগেও এমন সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। ম্যানেজার আমের খান বলেন, ‘এখানে আসার পর থেকে ওদের যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি, এগুলো আসলে স্বাগতিক দল একটা মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলতে চায়। আমরা এখনো সেভাবে পেশাদার হতে পারিনি।’
তবে হংকংয়ের পরিবেশ আকৃষ্ট করেছে কাবরেরাকে, ‘খুবই রোমাঞ্চকর পরিবেশ। বাংলাদেশে ম্যাচটা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। আমরা এই পরিবেশের সঙ্গে বেশ পরিচিত, হংকংয়ের এমন একটি সুন্দর ভেন্যুতে উন্মুখ হয়ে আছি অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে।’
এই সুন্দর ভেন্যুই বাংলাদেশের কাছে নরকে পরিণত হতে পারে। ম্যাচের ৫০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে দেড় ঘণ্টার মধ্যে। যেখানে খেলা হবে, সেই কাই তাক স্টেডিয়ামে রয়েছে ছাদঢাকার ব্যবস্থাও। ফলে স্বাগতিক দর্শকদের গর্জন ও উৎসাহ বাড়তি চাপ তৈরি করে প্রতিপক্ষের জন্য। আর বাংলাদেশ এ ধরনের স্টেডিয়ামে খেলে অভ্যস্ত নয়। গত জুনে ভারতের বিপক্ষে এমন পরিবেশেই খেলেছে হংকং। বাংলাদেশ ম্যাচেও তাই ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে হচ্ছে; বিশেষ করে ঢাকায় যখন দেখা গেছে ৭ গোলের রোমাঞ্চ।
তপু অবশ্য চাপ মনে করছেন না। উন্মুখ হয়ে আছেন চ্যালেঞ্জ নিতে, ‘জানি এই ম্যাচের টিকিট দেড়-দুই ঘণ্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। এটা আসলে আমাদের জন্য ভালো ব্যাপার বলে মনে করি। যখন দর্শকের মাঝে খেলবেন, সে জায়গায় কিন্তু আমাদের বাঙালি ভাইয়েরাও থাকবে, সেটাও আমি জানি। অবশ্যই এটা আমাদের দলের জন্য বাড়তি ভালো লাগার ব্যাপার।’