১৯৮৭,১৯৯৬, ২০১১,২০২৩-এ নিয়ে চার বিশ্বকাপ হচ্ছে উপমহাদেশে। স্বাভাবিকভাবেই এশিয়ার দলগুলোর দাপুটে পারফরম্যান্স দেখা যায়। আগের তিন বিশ্বকাপের মতো এবারও এশিয়ার দলের দাপট দেখা যাচ্ছে।
উপমহাদেশে হওয়া চার বিশ্বকাপের মধ্যে মিল যেমন রয়েছে, তেমনি ২০২৩ বিশ্বকাপ এক দিক থেকে ব্যতিক্রম। মিল হচ্ছে চার বিশ্বকাপে এশিয়া থেকে কোনো না কোনো দল সেমিতে উঠেছে। ১৯৮৭ তে ভারত ও পাকিস্তানে আয়োজিত বিশ্বকাপের দুই দলই সেমিফাইনালে উঠেছে। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভারত-শ্রীলঙ্কা দুটো দলই খেলেছে সেমিফাইনালে। সবচেয়ে বেশি এশিয়ার তিন দল সেমিতে উঠেছিল ২০১১ বিশ্বকাপে। সেবার সেমিতে মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান। অপর সেমিতে শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড। এরপর অল এশিয়ান ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। উপমহাদেশের প্রথম তিন বিশ্বকাপ থেকে ২০২৩ ব্যতিক্রম হওয়ার কারণ হচ্ছে এশিয়া থেকে একটা দলই উঠেছে সেমিফাইনালে। এশিয়ার একমাত্র দলটা হচ্ছে ভারত। বাকি তিন দল হচ্ছে: নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
তবে এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দশ দলের অর্ধেকই ছিল এশিয়ার। বাংলাদেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান-এশিয়ার এই পাঁচ দল খেলেছে এবারের বিশ্বকাপ। ভারতের পর এশিয়ার থেকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এই দুই দলের সেমিতে খেলার সম্ভাবনা ছিল তুলনামূলক বেশি। আফগানিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে শুরুটা দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের। এরপরই খেই হারানো শুরু করে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান-গুনে গুনে টানা ৬ ম্যাচ হারে প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বাজে ব্যবধানে হারায় নেট রানরেটেরও বেহাল দশা হতে থাকে সাকিব আল হাসানের দলের। যার মধ্যে নেদারল্যান্ডসের কাছে বাংলাদেশ হেরে যায় ৮৭ রানে। পুরো বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ২ ম্যাচ ও হেরেছে ৭ ম্যাচ। ৩২৮ রান করে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সমান ১০টি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও শরীফুল ইসলাম।
টানা চার ম্যাচ হারা পাকিস্তান এরপর বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আবার সেমির লড়াইয়ে ফিরেছিল। যেখানে বেঙ্গালুরুতে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ৪০২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানের ইনিংস ২৫.৩ ওভারে ১ উইকেটে ২০০ রানে থেমে যায়। বৃষ্টি আইনে ২১ রানে জিতে যায় বাবরের দল। এরপর পাকিস্তান চাতক পাখির মতো তাকিয়ে ছিল শ্রীলঙ্কা-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের দিকে। তবে নিউজিল্যান্ড বড় ব্যবধানে শ্রীলঙ্কাকে হারানোয় পাকিস্তান পড়ে যায় অবাস্তব এক সমীকরণের সামনে। তবে গতকাল কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে ২৮৭ রানে জয় বা ৪০ বলে ৩৩৮ রানের সমীকরণ-কোনোটাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মেলাতে পারেনি পাকিস্তান।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান-দুই প্রতিবেশী দেশের চেয়ে বিধ্বংসী পারফরম্যান্স করেছে ভারত। নিজেদের ৮ ম্যাচের ৮ টিতে জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ২০২৩ বিশ্বকাপের আয়োজক দল। যেখানে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫৫ ও ৮৩ রানে অলআউট করে দিয়েছে ভারত। এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় ১ ও ৪ নম্বরে আছেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। ২ সেঞ্চুরি করে ওয়ানডে বিশ্বকাপে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড করেন কোহলি। বোলারদের মধ্যে মোহাম্মদ শামি ও জসপ্রীত বুমরা নিয়েছেন ১৬ ও ১৫ উইকেট। বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় শামি নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেছেন।
তবে সেমিফাইনালে না উঠলেও মনে রাখার মতো বিশ্বকাপ এবার খেলেছে আফগানিস্তান। ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা-তিন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলকে হারিয়েছে আফগানরা। এরপর নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে সেমির সম্ভাবনা জাগিয়েছিল আফগানিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩ উইকেটে হারলেও দাপট দেখিয়েছিল আফগানিস্তান। এরপর সব সমীকরণ ওলটপালট করে দেয় শ্রীলঙ্কা-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ। যার ফলে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৪৩৮ রানের ব্যবধানে জিততে হতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সেই ম্যাচে ৫ উইকেটে আফগানরা হারলেও প্রথমে ব্যাটিং করে ২৪৪ রান করেছিল। বিশ্বকাপে আফগানদের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ইব্রাহিম জাদরান হয়েছিলেন এবারই।