বেশি দিন আগের ঘটনা নয়। ৪ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে আফগানিস্তানের পেসার বিলাল সামি লিখেছিলেন, ‘গট ম্যারিড’। কিন্তু সামি কি তখনো জানতেন, বিয়ের দুই সপ্তাহের মধ্যেই এমন কিছু করে ফেলবেন, যা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে।
সামি বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলে সুযোগ পেয়েছেন হুট করেই। আফগান পেসার মোহাম্মদ সালিম পেশির চোটে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন। তাঁর পরিবর্তে সামি সুযোগ পেয়ে করেছেন বাজিমাত। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই পেয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার। আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে গত রাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৫ উইকেট।
মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা সামির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আফগানিস্তানের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে সামির। তবে শুরুটা হয়নি মনে রাখার মতো। হারারেতে সেই ম্যাচে ৩ ওভারে ২৫ রান দিয়েও পাননি কোনো উইকেট। আফগানিস্তান এরপর সাদা বলের ক্রিকেটে নিয়মিত খেললেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর সুযোগ মেলেনি সামির। কিন্তু তিনি যে মোটেও হাল ছাড়ার পাত্র নন। কদিন আগে শেষ হওয়া গাজী আমানুল্লাহ খান রিজিওনাল ওয়ানডে টুর্নামেন্টে তিনি খেলেছেন স্পিনঘার অঞ্চলের হয়ে। আফগানিস্তানের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের এই টুর্নামেন্টে ২২.৯০ গড় ও ৪.৯৭ ইকোনমি রেটে পেয়েছেন ১০ উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে যা করা দরকার, তা তো সামি করেছেন। কিন্তু সুযোগটা যে পেতে হবে। সালিমের চোট সুযোগ করে দিয়েছে সামিকে।
ওয়ানডে দলে সুযোগ পেলেও একাদশে জায়গা মিলছিল না সামির। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে খেলার সুযোগই পাননি তিনি। আবুধাবিতে গতকাল তৃতীয় ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম উইকেটের দেখা পেলেন। শুধু কি একটা উইকেটই পেয়েছেন তিনি? গুনে গুনে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে নাজমুল হোসেন শান্তকে বোল্ড করে সামির শুরু। আফগান এই পেসার এরপর নিয়েছেন মিরাজ, তানভীর ইসলাম, রিশাদ হোসেন ও হাসান মাহমুদের উইকেট। যেখানে ২৮তম ওভারের প্রথম বলে সামিকে পুল করতে যান হাসান। আকাশে দীর্ঘক্ষণ ভেসে থাকা বল তালুবন্দী করেছেন আফগান উইকেটরক্ষক ইকরাম আলী খিল।
৭.১ ওভারে ৩৩ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন সামি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ইনিংসে প্রথমবার ৫ উইকেট পেয়েই ম্যাচসেরা বনে গেলেন তিনি। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আফগান পেসার বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম করেছি। দল পাশে ছিল। দলে অনেক বিকল্প ক্রিকেটার আছে। কাজটা তাই সহজ ছিল না। নিজের সেরাটা দিতে পেরে ভালো লাগছে।’ বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২১৩ রান করেছেন ইবরাহিম জাদরান। এটা এই সিরিজেরই সর্বোচ্চ রান। যার মধ্যে দ্বিতীয়, তৃতীয় ওয়ানডে—দুই ম্যাচেই সমান ৯৫ রান করে আউট হয়েছেন। সিরিজসেরার পুরস্কার পেলেও সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপটা তাঁর রয়েই গেল।
সামি সীমিত ওভারের ক্রিকেটেই মূলত নিয়মিত খেলছেন। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২৭ ও ২৬ ম্যাচ খেলেছেন। ৪৯ ও ৩৩ উইকেট পেয়েছেন লিস্ট ‘এ’ ও টি-টোয়েন্টিতে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আফগান এই পেসার ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ২৫ উইকেট।