নারী পাচারের নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে অপরাধী চক্র। আগে বিদেশে ভালো চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হতো। দরিদ্র পরিবারের তরুণীরা এতে বেশি আকৃষ্ট হতো। এখন প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে নারী পাচার করা হচ্ছে। পদ্ধতি নতুন, কিন্তু ফাঁদ পুরোনো। এই কৌশলটি একদিকে যেমন অপরাধীদের পরিচয় গোপন রাখতে সাহায্য করছে, তেমনি ভুক্তভোগীকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তাদের পক্ষে অপহরণের কাজটি সহজ করে তুলছে।
ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে ভারতে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে। ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া ইউনিয়নের চকহলনী মোড়ে রাস্তা
থেকে অজ্ঞাতনামা আসামিরা একটি মাইক্রোবাসে করে তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে ১৬ নভেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এ ঘটনায় নজির আহমেদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য থেকে জানা যায়, তিনি, তাঁর ভাই এবং অপরাপর আসামিরা গত ২৪ অক্টোবর মেয়েটিকে গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে দেন। এই মানব পাচারের বিনিময়ে তাঁরা মোটা অঙ্কের টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেন।
মানব ও নারী পাচারের ঘটনাগুলো নতুন নয়। এর আগে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে র্যাব নারী পাচারকারীদের এক ভয়ংকর চক্রের সন্ধান পেয়েছিল। যারা প্রতারণা করে নারীদের সিরিয়ায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিত। এরপর তাদের যুদ্ধক্ষেত্রের সেনাদের যৌনদাসী হিসেবে কাজে বাধ্য করত। সেই ঘটনায় প্রায় ৪৩ জন নারীকে পাচার করা হয়। সিরিয়াফেরত তিন ভুক্তভোগী নারী এ কথা বলেছিলেন।
তারপর ২০২১ সালের জুন মাসে নারী পাচারের আরেকটি অতি অভিনব কৌশলের কথা আমরা জানতে পেরেছিলাম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এক নারী নির্যাতনের ভিডিও থেকে। সেই ভিডিও থেকে জানা যায়, টিকটকের তারকা বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করা হয়েছে অনেক নারীকে। পাচারের শিকার এক তরুণী ভারত থেকে ফিরে বীভৎস নির্যাতনের তথ্য দিয়েছিলেন পুলিশকে। তাঁর পাচারকারী ছিলেন হৃদয় বাবু নামে এক টিকটকার।
এই চক্রের মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার নারী পাচার হয়েছিল।
নারী-শিশু পাচারকারী চক্রগুলো এ দেশে বহু বছর ধরে তৎপর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এ ধরনের ঘটনা
ঘটত না। প্রেমের নামে পাচারের এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে, তেমনি অপরাধীরাও নতুন ফাঁদ পাতার সুযোগ পাচ্ছে।
ব্রিটিশ আমলের তৈরি করা একটি আইন এখনো চলছে। এ আইনের দুর্বলতা হলো, যারা পাচারকারী চক্রের মূল হোতা, তাদের সাজা হয় না। সাজা হয় শুধু মানব পাচার চেইনের মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকা দালালদের। মানব পাচার আইনকে আরও যুগোপযোগী করে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। যাতে মূল অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।