একটু ভেবে দেখুন, নিশ্চয়ই পরিবর্তন হয়েছে। গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর কোনো পরিবর্তন হয়নি ভেবে যাঁরা হতাশ হচ্ছিলেন, তাঁরা নড়েচড়ে বসতে পারেন। আন্দোলনের পর প্রথম পরিবর্তনটাই তো হলো নতুন সরকার গঠন। কেতাবি ভাষায় বলা ভালো, উপদেষ্টা কেবিনেট গঠন করা হয়েছে, যাঁরা এখন এ দেশের অভিভাবক। অন্যায়-অপরাধের তাজ মাথায় নিয়ে একটি দল নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়াটা একটা বিরাট পরিবর্তন।
তাদের সেই তাজ অন্য কেউ কেড়ে মাথায় পরে নেওয়াটাও পরিবর্তন বটে। চাঁদাবাজির খবরগুলোই এর প্রমাণ। বিগত সরকারের আমলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য যাঁরা কোণঠাসা হয়ে ছিলেন এত দিন, তাঁরা যে সক্রিয় হতে পেরেছেন, তা কি পরিবর্তন নয়? আলবৎ পরিবর্তন।
এই পরিবর্তনের উদাহরণ আজকাল প্রায়ই খবরে পাওয়া যাচ্ছে। এই যেমন, ২৪ নভেম্বর আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণের দায়িত্ব পান স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতা। অথচ এসব সুযোগ আগে হয়তো পেতেন বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ কোনো দলের নেতারা। তাহলে বলা যায়, পরিবর্তন হয়েছে।
তবে, যা পরিবর্তন হয়নি তা হলো, কারও কারও স্বভাব। পাঠক, এটাকে আপনি রাজনৈতিক স্বভাব বলেও চালিয়ে দিতে পারেন। কারণ রাজনৈতিক দাপট না থাকলে এই স্বভাবগুলো চর্চা করা মুশকিল। লতিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কথাই ধরুন। ডিলার না থাকায় চাল বিতরণের জন্য ডেলিভারি অর্ডার বা ডিও বরাদ্দ দেওয়া হয় ইউপির সচিব জেসমিন আরা জুঁথির নামে। কিন্তু ১৪, ১৬ ও ১৭ নভেম্বর ১৫ টাকা কেজির চাল বিতরণ করেন স্থানীয় বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম ও জামায়াতের নেতা সামসুল হক। ডিলার না থাকায় তাঁরা এই দায়িত্ব পালন করেন। নিজেরা টাকা দিয়ে চাল উত্তোলন করেন। ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধি হতে হলে এমন পরোপকারী ইমেজের বিকল্প নেই। তাঁরা যেভাবে কাজ করছেন, তা তো খুব ভালো কথা। কিন্তু মন্দ কথাটা হলো, এই কর্মসূচির ২৮ বস্তা চাল গায়েব হয়ে গেছে!
স্থানীয়দের ধারণা এবং চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বোঝাই যাচ্ছে, রহস্যজনকভাবে চালের বস্তা উধাও হয়ে যাওয়া কোনো পরিবর্তনের উদাহরণ নয়, বরং অপরিবর্তনীয় স্বভাবের উদাহরণ। কাগজ-কলমে চালের ঘাটতি থাকলেও যারা পায়নি, তাদের সবাইকে চাল বুঝিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও লতিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক আবদুল হামিদ।
কিন্তু তাতে কি আসল সমস্যার সমাধান হবে? চালের বস্তা কোথায় গায়েব হয়ে গেল, কে বা কারা গায়েব করল—এই অনিয়মের জবাব কে দেবে? এই যে এ ধরনের কর্মসূচিতে বা কোনো দুর্যোগে ত্রাণের জিনিসপত্র হঠাৎ উধাও হয়ে যায়, সেই রহস্য ভেদ কে করবে? আছেন এমন কোনো উদ্ধারকর্তা? কেউ যদি না-ই থাকেন, তাহলে পরিস্থিতি যে লাউ সেই কদুই হয়ে থাকবে। পরিবর্তন হবে না। এসব ‘ছোটখাটো’ ব্যাপারে দেশের অভিভাবকেরা কী ভাবেন, তা-ও এক রহস্য!