কোনো ধরনের অনুমতি ও লাইসেন্স ছাড়াই দুই বছর ধরে ব্যবসা করে আসছে 'ধামাকা শপিং ডট কম'। কয়েকটি দেশি-বিদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারের আলোকে ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে কোনো বিনিয়োগ ছাড়া গড়ে ওঠা ধামাকা লেনদেন করেছে ৭৫০ কোটি টাকা। সংবাদ সম্মেলনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানিয়েছেন।
ধামাকা অনলাইন শপের সিওও সিরাজুল ইসলাম রানাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ানা বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আল মঈন বলেন, ২০১৮ সালে শুরু হওয়া 'ধামাকা ডিজিটাল' ২০২০ সালে নাম পাল্টে 'ধামাকা শপিং ডট কম' হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। তবে একই বছরের অক্টোবর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নেতিবাচক আক্রমণাত্মক কৌশল নিয়ে মাঠে নামে।' ধামাকা শপিং ডট কম' ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে মূলত ইনভেনটরি জিরো মডেল ও হোল্ড মানি প্রসেস কৌশল ফলো করত। কয়েকটি দেশি-বিদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারের আলোকে 'ধামাকা শপিং ডট কম' ব্যবসায়িক কৌশল তৈরি করে। ব্যবসায়িক অবকাঠামোতে মহাখালীতে তাদের প্রধান কার্যালয় এবং তেজগাঁও বটতলা মোড়ে একটি ডেলিভারি হাব রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৬০০ ব্যবসায়িক চেইন রয়েছে। এর মধ্যে নামীদামি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে র্যাবের এই মুখপাত্র জানান, 'ধামাকা শপিং ডট কম'-এর কোনো অনুমোদন ও লাইসেন্স নেই, ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট নেই। ব্যবসা পরিচালনায় ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন করেছে ধামাকা। বর্তমানে সেলার বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৮০ থেকে ১৯০ কোটি টাকা, কাস্টমার বকেয়া ১৫০ কোটি টাকা এবং কাস্টমার রিফান্ড চেক বকেয়া ৩৫-৪০ কোটি টাকা।
র্যাব বলছে, আর্থিক সংকটের কারণে গত কয়েক মাস প্রতিষ্ঠানের অফিস ও স্টোর ভাড়া বকেয়া রয়েছে। পাশাপাশি চলতি বছরের জুন থেকে কর্মচারীদের বেতন বন্ধ।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার টাকা পরিশোধ করেও পণ্য না পাওয়ায় টঙ্গীতে ধামাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন টঙ্গীর একটি পোশাক কারখানার যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী মো. শামীম খান।
মামলায় বিবাদী করা হয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএমডি জসিমউদ্দিন চিশতী (৫৭), চেয়ারম্যান ডা. এম আলী ওরফে মোজতবা আলী (৬০), সিওও সিরাজুল ইসলাম রানা, প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা ডিএমডি দেবকর দে শুভ (৩২), নাজিম উদ্দিন আসিফ (২৮), এজিএম হেড অব অ্যাকাউন্টস সাফোয়ান আহমেদ (৪১), ডেপুটি ম্যানেজার আমিরুল হোসাইন (৪৬), আসিফ চিশতী (২৬), সিস্টেম ক্যাটাগরি হেড ইমতিয়াজ হাসান (৩৫), ভাইস প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম স্বপন (৩৫) ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরোধ বারান রয়কে (৪৫)।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিওও মো. সিরাজুল ইসলাম রানা (৩৪), মো. ইমতিয়াজ হাসান সবুজ (৩১) ও মো. ইব্রাহিম স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।