দেশে জ্বালানি তেলের দাম এক সপ্তাহ আগে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসসহ প্রায় সবকিছুর দাম। এমন পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি পেট্রলের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ট্রাকে করে শাক-সবজি পরিবহন করেন। মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বিবিসিকে বলেছেন, তিনি ভীষণ ভয়ের মধ্যে আছেন। হয়তো শিগগিরই তাঁকে ভিক্ষা করতে রাস্তায় নামতে হবে।
পেট্রলের দাম দেশে এখন প্রতি লিটার ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনের দামও বেড়েছে সাড়ে ৪২ শতাংশ। এমন অবস্থায় বিরাট বিপদে পড়েছেন মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। তিনি দীর্ঘ ৯ বছর ধরে একটি পরিবহন কোম্পানিতে কাজ করেন। কিন্তু যা বেতন পান, তা দিয়ে এখন তাঁর মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে সীমাহীন সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের বয়স ৩৫ বছর। তাঁর বাড়ি দিনাজপুরে। সেখান থেকে ট্রাকে করে তাজা শাকসবজি নিয়ে তিনি ঢাকায় আসেন। তাঁর ঘরে দুটি সন্তান রয়েছে, মা-বাবা আছেন। তাঁদের আর্থিকভাবে সাহায্য করতে হয়। কিন্তু যে পরিবহন কোম্পানিতে তিনি চাকরি করেন, সেই মালিকপক্ষ বলেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পুরো বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না।
বিবিসির সাংবাদিককে নুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের দাম এত বেড়ে গেছে, আমি আমার পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারটুকুও এখন কিনতে পারি না। অবস্থা যদি এ রকম চলতে থাকে, আমি হয়তো আমার মা-বাবাকে দেখভাল করতে পারব না। সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারব না। এই মুহূর্তে যদি আমার চাকরিটা চলে যায়, আমাকে রাস্তায় ভিক্ষা করতে শুরু করতে হবে।’
বিবিসি বলেছে, নুরুল ইসলামের মতো অবস্থা এখন লাখ লাখ মানুষের। মোসাম্মাত জাকিয়া সুলতানা তেমনই একজন। তিনি তাঁর অসুস্থ সন্তানকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িভাড়া জোগাড় করতে পারছেন না। কারণ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর সব ধরনের গাড়িভাড়া বেড়েছে।
জাকিয়া সুলতানা যখন বিবিসির সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন পাশে দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর কিশোরী মেয়ে। তিনি বলেছেন, শুধু যে বাসের ভাড়া বেড়েছে তাই নয়, খাবারের দাম বেড়েছে, বাজারের সবকিছুর দাম বেড়েছে। এখন আমার সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে পেড়েছে।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কৃষিকাজ করেন শিউলি হাজরা। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমার খামার করা কিংবা খাদ্য কেনার সামর্থ্য নেই। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে খামারের খরচ অনেক বেড়ে গেছে, যা আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।’
শিউলি আরও বলেছেন, ‘সরকার যদি জ্বালানি তেলের দাম না কমায়, আমাদের অনাহারে মরতে হবে।’
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা জানি, বড় রকমের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে আমরা কী করতে পারি?’
অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ অস্বীকার করে নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘অতীতে আমরা জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিয়েছি। কিন্তু এখন সম্ভব হচ্ছে না বলে অনিবার্যভাবে দাম বেড়ে গেছে। যদি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যায়, আমরা তখন অবশ্যই মূল্য সমন্বয় করার চেষ্টা করব।’
নসরুল হামিদ বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমলেও বাংলাদেশের পরিণতি শ্রীলঙ্কার মতো হবে না।
বিবিসি আরও বলেছে, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পাওয়া বাংলাদেশ সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ খুঁজেছে। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পর বাংলাদেশ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় দেশ, যারা আইএমএফের কাছে ঋণের জন্য দ্বারস্থ হয়েছে।