হোম > জাতীয়

চিকেন’স নেক কী? বাংলাদেশ-ভারত-চীন ভূ-রাজনীতিতে এর গুরুত্ব কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

চিকেন’স নেক বা শিলিগুড়ি করিডর হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি সংকীর্ণ ভৌগোলিক করিডর, যা ভারতীয় মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সঙ্গে যুক্ত করে। এই করিডর মাত্র ২০-২২ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং দেখতে অনেকটা মুরগির গলার মতো সরু, তাই এর নাম চিকেন’স নেক। দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির মাঝামাঝি অবস্থিত এই সরু করিডরের এক পাশে আছে নেপাল ও ভুটান, অন্যদিকে বাংলাদেশ ও চীন (তিব্বতের চুম্বি ভ্যালি)।

সম্প্রতি চিকেন’স নেক নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ও চীনের সঙ্গে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা চিকেন’স নেক অঞ্চলে হঠাৎ করেই সেনা উপস্থিতি বাড়িয়েছে ভারত। মূলত বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি মন্তব্য ঘিরে আলোচনার মধ্যে এই ঘটনা ঘটল।

‘স্থলবেষ্টিত’ উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগের প্রবেশপথ সমুদ্রের ‘একমাত্র অভিভাবক’ হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরে চীনকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তাঁর এই মন্তব্য ভারতীয় রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

মণিপুরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহও ইউনুসের মন্তব্যের নিন্দা করে বলেছেন, উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে ‘কৌশলগত পুতুল’ হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘সংযম প্রদর্শন’ করতে হবে।

আসাম জাতীয়া পরিষদ (এজেপি) নেতারা ইউনুসের মন্তব্যকে ‘উসকানিমূলক ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে সমালোচনা করেছেন। আসামে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল সুরক্ষিত রাখতে করিডরের নিচে এবং চারপাশে শক্তিশালী রেলপথ ও সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। ড. ইউনূসের মন্তব্যে ভারতের অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং সংযোগের জন্য শক্তিশালী অবকাঠামো তৈরির কথা তুলে ধরেছেন তাঁরা।

চিকেন’স নেকের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব

চিকেন’স নেক বা শিলিগুড়ি করিডর অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম ও ত্রিপুরা—এই ৮ রাজ্যকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে। করিডরটি নাগরিকদের চলাচল ও সামরিক সরবরাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের লাইফলাইন। এই করিডর দিয়েই ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যে সব ধরনের রসদ, পণ্য এবং সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়।

এই রুটে কোনো রকমের ব্যাঘাত ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। এই কারণে এর সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় ভারত। ভারতের সীমান্তে চীনের সামরিক অবকাঠামো সম্প্রসারণের প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের উত্তেজনা আরও বেড়েছে। চীন যদি এই অঞ্চল দখল করতে পারে, তাহলে ভারতীয় উত্তর-পূর্ব অঞ্চল কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

শিলিগুড়ি করিডরের খুব কাছেই রয়েছে ডোকলাম, যেখানে ২০১৭ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। ডোকলামে সংঘর্ষ শিলিগুড়ি করিডরের দুর্বলতা তুলে ধরে। এরপর ভারত এই অঞ্চলে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করে। করিডরেই প্রধান রেলপথ থাকায় তা কৌশলগত উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, বৈরিতার সময় এটি লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। এটি বন্ধ হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশের অবস্থান এই করিডরের খুব কাছাকাছি বলে ভারতের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সদ্ভাব অপরিহার্য। চিকেন’স নেকের ওপর নির্ভরতা কমাতেও বিকল্প যোগাযোগে রুটও একমাত্র বাংলাদেশ দিতে পারে।

ভারতের বিকল্প সংযোগ পরিকল্পনা

শিলিগুড়ি করিডরের ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য বিকল্প রুটের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। ১৯৮০ সালের ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য চুক্তির ধারা ৮ এর আওতায় বাংলাদেশে নতুন ট্রানজিট রুট তৈরির চেষ্টা আছে ভারতের। এর ফলে উত্তর-পূর্বের সঙ্গে বাকি দেশের সংযোগ উন্নত হবে।

পরিবহন, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও যৌথ অবকাঠামো প্রকল্পে বাংলাদেশ-ভারতের সহযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। দুদেশের মধ্যে রেল, সড়ক ও নৌপথে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে (যেমন আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার)।

১৯৯২ সালে ভারত বাংলাদেশকে তিনবিঘা করিডর ব্যবহার করতে অনুমতি দেয়, যা দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলে প্রবেশের সুবিধা দেয়। উত্তর-পূর্ব ও দেশটির বাকি অংশের মধ্যে উন্নত সংযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ হয়ে একটি রেলপথ নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করছে ভারত।

বাংলাদেশ হয়ে বিকল্প করিডর এরই মধ্যে ভারত পেয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনকালে বাংলাদেশ ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয়, যার মাধ্যমে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুম সাব-ডিভিশন এবং ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু সংযুক্ত হয়। এই পদক্ষেপ ভারতকে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার দেয় এবং চিকেন’স নেকের ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমিয়ে দেয়।

চিকেন’স নেক শুধু ভৌগোলিক করিডর নয়, এটি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য, কূটনীতি ও যোগাযোগব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। এটি যেকোনো ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

মির্জা ফখরুলের জন্য মনটা কাল থেকে খুব বিষণ্ন হয়ে আছে: প্রেস সচিব

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান আর নেই

২০২৫ সালে গণপিটুনি বেড়ে দ্বিগুণ: এমএসএফ

খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

পোস্টাল ভোট দিতে ১১ লাখ নিবন্ধন, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়াল ইসি

খালেদা জিয়ার জানাজায় এসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তানের স্পিকারের কুশল বিনিময়

২০২৫ সালজুড়ে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ‘মব সন্ত্রাস’: আইন ও সালিশ কেন্দ্র

ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পাকিস্তানের স্পিকার ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

‘খালেদা জিয়াকে এভাবে বিদায় দিতে হবে ভাবিনি’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমানের পদত্যাগ