হোম > ইসলাম

নরসিংদীর ঐতিহাসিক প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্য

কাউসার লাবীব

বেলাব জামে মসজিদ

মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, আড়িয়াল খাঁ ও পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের তীরবিধৌত প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহ্যে লালিত জেলার নাম নরসিংদী। এ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্য। আছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক মসজিদ। এই স্থাপনাগুলো যেমনি প্রাচীন স্থাপত্যরীতির সাক্ষ্য দেয়, তেমনি তুলে ধরে মুসলিম ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়।

কালের সাক্ষী বেলাব জামে মসজিদ

বাংলাদেশের দৃষ্টিনন্দন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। প্রায় ৩০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদটির প্রথম প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা ছিলেন বেলাব উপজেলার বাজনাব ইউনিয়নের বাসিন্দা মাহমুদ ব্যাপারী।

প্রথম নির্মাণের সময় মসজিদটির ছিল সাতটি গম্বুজ, যা একে অত্র এলাকার অন্যান্য মসজিদ থেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছিল। লোকমুখে প্রচলিত আছে—প্রতিষ্ঠার শুরুর সময় মসজিদের ভেতর কোরআন তিলাওয়াতের গায়েবি আওয়াজ শোনা যেত। এই কারণেই মসজিদটি ‘ফজিলতের মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জুমার নামাজে এখানে বিপুলসংখ্যক মুসল্লির সমাগম হতো, যা ধীরে ধীরে মসজিদের ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যায়। মুসল্লির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় মসজিদটি আধুনিক অবকাঠামোতে নির্মাণ করা হয়। তিনতলাবিশিষ্ট এই বিশাল মসজিদটি শুধু নামাজ আদায়ের স্থান নয়, বরং দর্শনার্থীদের কাছেও একটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। মসজিদের ভেতরে ঝাড়বাতির দৃষ্টিনন্দন সাজ, সুউচ্চ মিনার ও গম্বুজ এবং পশ্চিম পাশে অবস্থিত পুকুর—সব মিলিয়ে এটি এক অপূর্ব সৌন্দর্য ধারণ করে। রাতে বৈদ্যুতিক আলোয় আলোকিত হয়ে পুরো এলাকা এক দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা যেকোনো দর্শনার্থীর মন কাড়ে।

দেওয়ান শরিফ মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত

৩০০ বছরের পুরোনো দেওয়ান শরিফ মসজিদ

নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার নিবিড় পল্লি পারুলিয়া গ্রামে শান্ত পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে ৩০০ বছর পুরোনো একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা মোগল আমলের এই নিদর্শনটি মুসলিম স্থাপত্য ও ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল।

১৭১৯ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন বাংলার সুবেদার মুর্শিদকুলি খাঁর কন্যা ও ঈশা খাঁর পঞ্চম অধস্তন বংশধর দেওয়ান শরিফ খাঁর স্ত্রী—জয়নব বিবি। মসজিদটির আওতায় রয়েছে প্রায় ১২ বিঘা জমি। রয়েছে চারটি শানবাঁধানো পুকুরঘাট। প্রায় ৫ ফুট প্রস্থ দেয়ালে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে মজবুত পাথরের খিলান এবং শিল্পসুষমামণ্ডিত কারুকাজ। মসজিদে রয়েছে একটি প্রধান গেট, পূর্বদিকে তিনটি দরজা এবং উত্তর ও দক্ষিণ পাশে একটি করে দরজা। প্রাঙ্গণের উত্তর-পূর্ব কোণে দাঁড়িয়ে আছে দুটি সুউচ্চ মিনার। প্রাচীরবেষ্টিত প্রশস্ত প্রাঙ্গণজুড়ে মসজিদটির পরিবেশ এক অনন্য পবিত্রতা সৃষ্টি করে।

মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্মাণকালে ইরান, বাগদাদ ও ইয়েমেন থেকে আনা হয়েছিল দক্ষ কারিগরদের, যা এর শিল্পনির্মাণে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত। মসজিদের পাশেই, পশ্চিম দিকের পুকুরঘাটের পূর্ব তীরে রয়েছে এক গম্বুজবিশিষ্ট সৌধ। এখানে রয়েছে দেওয়ান শরিফ খাঁ ও তাঁর স্ত্রী জয়নব বিবির যুগল সমাধি।

আটকান্দি নীলকুঠি মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত

তাজমহলের আদলে আটকান্দি নীলকুঠি মসজিদ

রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের আটকান্দি গ্রামে অবস্থিত আটকান্দি নীলকুঠি জামে মসজিদ। এটির নির্মাতা মৌলভি আলিম উদ্দিন, যিনি দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে মাওলানা পাস করেছিলেন। মেঘনার শাখা নদীর পাড়ে, ছায়ানিবিড় পরিবেশে স্থাপিত এ মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে।

মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী মোগল আমলের নিদর্শন বহন করে। সুদূর মহীশূর থেকে আনা কারিগরদের দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। অনেকে এর গম্বুজগুলোর সঙ্গে আগ্রার তাজমহলের গম্বুজের তুলনা করেন। মসজিদটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এর আটটি গম্বুজ—মূল মসজিদে তিনটি। এর মধ্যে মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত বড়; এবং বারান্দায় রয়েছে আরও পাঁচটি গম্বুজ। এই আটটি গম্বুজ থেকে গ্রামেরও নামকরণ হয় ‘আটকান্দি।’

মসজিদটির প্রবেশপথ অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। বারান্দায় প্রবেশের জন্য সাতটি এবং ভেতরে প্রবেশের জন্য রয়েছে দুটি দরজা। বারান্দা ও দেয়ালের গায়ে রয়েছে ৩৪টি খিলান, প্রতিটির দেয়ালের ওপর রয়েছে শৈল্পিক কারুকাজ। দেয়ালগুলো দুই ফুট পুরু। মসজিদের কারুকাজে ব্যবহৃত হয়েছে বাহারি রঙের মোজাইক, মার্বেল এবং দুর্লভ পুঁথি পাথর। মিহরাবে রয়েছে নানা ফুল ও পাতার চিত্রকর্ম।

আশ্রাবপুর গায়েবি মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত

আশ্রাবপুর গায়েবি মসজিদ

আশরাফপুর গ্রামটি নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার একটি প্রাচীন জনপদ। এই জনপদেই বিস্ময় জাগানো গায়েবি মসজিদের অবস্থান। মসজিদটি ১৫২৪ খ্রিষ্টাব্দে গৌড়ের স্বাধীন নরপতি আলাউদ্দিন হোসেন শাহের পুত্র সুলতান নাসিরুদ্দিন আবুল মুজাফফর নসর শাহর শাসনামলে দিলওয়ার খান নির্মাণ করেছিলেন। এটি ছিল সুলতানি স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত এক গম্বুজবিশিষ্ট ছোট মসজিদ।

তবে ১৮৯৭ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে মসজিদটি ভেঙে পড়ে এবং পরবর্তী সময়ে জঙ্গলে ঢাকা পড়ে। ঘন জঙ্গলে ঢাকা অবস্থায় এটি একরকম হারিয়েই গিয়েছিল ইতিহাসের পাতায়! পরে ১৯৪০ সালে মাওলানা সৈয়দ আলীর নেতৃত্বে জঙ্গল পরিষ্কার করে মসজিদটি পুনরুদ্ধার করা হয়। অনেকেই তখন একে ‘গায়েবি মসজিদ’ নামে অভিহিত করতেন। সে সময়ও মিহরাব এবং পশ্চিম দেয়ালের কিছু অংশ অবশিষ্ট ছিল। বর্তমানে ওই স্থানেই একটি আধুনিক তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ নির্মিত হয়েছে।

মসজিদটির উত্তরে একসময় ছিল বৃহৎ দিঘি, যার অস্তিত্ব আজ আর দৃশ্যমান নয়। কিন্তু তার নিঃশব্দ চিহ্ন আজও মাটি ও স্মৃতিতে বিদ্যমান। দিঘির পাশেই রয়েছে পাথর দিয়ে বাঁধানো চারটি কবর, যা নির্মাতা বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সমাধি বলে ধারণা করা হয়।

মসজিদগুলো হয়ে উঠুক শিশুবান্ধব

ফুটপাতে পথশিশুদের হিমশীতল রাত

ফরজ গোসলের সময় নারীদের চুল ধোয়ার বিধান

শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামার হারিয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়

আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

দাওয়াতুল হকের মারকাজি ইজতেমা শনিবার

একের পর এক ভূমিকম্প মুমিনকে যে সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছে

স্ত্রীর সঙ্গে ভালোবাসার গভীরতা বাড়াবে যে সুন্নাহ

আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

কুকুরকে পানি পান করিয়ে আল্লাহর ক্ষমা পেয়েছিলেন যে নারী