ঈদুল আজহার ফজিলতপূর্ণ আমল কোরবানি। কোরবানির সুবাস এখনো আমাদের আশপাশে ছড়িয়ে আছে। অনেকের হাঁড়িতে এখনো ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে কোরবানির মাংস। ত্যাগ ও উৎসবের আমেজে এক বছর পর আবার ফিরে আসবে কোরবানি। কিন্তু কোরবানি আমাদের সমাজে যে শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এসেছিল, তা আমরা কতটা অর্জন করতে পেরেছি?
ত্যাগের অধ্যায় কোরবানিতে মুমিনের জন্য রয়েছে বেশ কিছু শিক্ষণীয় বিষয়। তা থেকে এখানে কিছু তুলে ধরা যাক—
- আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় করা এবং তাঁর হুকুম-আহকাম মেনে চলা।
- আল্লাহ তাআলার কাছে আত্মসমর্পণ করা। তাঁর আদেশ সেভাবে পালন করা, যেভাবে রাসুল (সা.) বলে গিয়েছেন। কোনো বিষয়ে টালবাহানা না করা। কোরবানির ইতিহাস থেকে আমরা জেনেছি, নবী ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নে দেখলেন, হজরত ইসমাইল (আ.)-কে জবাই করছেন। এটা যদিও স্বপ্ন ছিল, কিন্তু নবীগণের স্বপ্ন ওহির মতো হয়ে থাকে। তাই এ স্বপ্নের অর্থ ছিল, আল্লাহর পক্ষ থেকে ইবরাহিম (আ.)-কে একমাত্র সন্তান ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানির আদেশ করা হয়েছে।
হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দীর্ঘদিনের আশা ও দোয়ার ফল প্রিয় পুত্র ইসমাইল। কিন্তু তাঁর কাছে আল্লাহর আদেশ ছিল সবার ওপরে। তিনি খুশিমনে এ আদেশ পালন করতে রাজি হয়ে গেলেন। কেননা সন্তান আল্লাহ তাআলাই দান করেছেন। এখন তিনিই তাঁকে কোরবানি করার আদেশ করেছেন। আল্লাহর দেওয়া সম্পদ তাঁর জন্য কোরবান করতে দ্বিধা কিসের! বান্দার জন্য এটা বরং সৌভাগ্যের বিষয়।
- লোকদেখানোর জন্য নয়, বরং আল্লাহর জন্য ভালো কাজ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহর কাছে সেগুলোর গোশত পৌঁছায় না এবং সেগুলোর রক্তও না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। (সুরা হজ: ৩৭)
- কোনো ইবাদত বা নেককাজ করার তৌফিক হলে অহংকার না করা, আত্মমুগ্ধতায় ডুবে না যাওয়া। বরং বিনয়ী হওয়া এবং অন্তরে এই অনুভূতি থাকা যে এটা একমাত্র আল্লাহর দয়াই আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে, অন্যথায় আমার পক্ষে তা সম্ভব ছিল না।
- সন্তানকে আল্লাহ তাআলার অনুগত বানানোর চেষ্টা করা। নবী ইবরাহিম (আ.) যখন স্বপ্নের কথা ইসমাইল (আ.)-কে জানালেন, সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বললেন, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে, তা করে ফেলুন। আপনি আমাকে ইনশা আল্লাহ অবশ্যই ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। (সুরা সাফফাত: ১০২)
- অন্যের প্রতি সহমর্মী হওয়া। কোরবানির সময় যেভাবে প্রতিবেশীকে কোরবানির গোশত দিই, অন্য সময়েও যেন সেভাবে তাদের সহায়তা করি, প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াই।
কোরবানির শিক্ষায় আমাদের জীবন হোক ইবাদতময়। ত্যাগ ও বিনয়ে ভরে উঠুক জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত।