স্কুল শেষ করেছি। ক্রিকেটের অতিদ্রুত মুনাফা ফরমেট টি-টোয়েন্টি তখনও চালু হয়নি । জাভেদ ওমরের কাছ থেকে একটা ড্রাইভের স্বপ্নে যখন পুরো কৈশোর কেটে যাচ্ছিল, তখন দুটো নতুন শব্দ আমাদের মধ্যে চমকের মতো করে উড়ে এসেছিল। আমরা ভীষণ আলোড়িত হয়েছিলাম। প্রথম শব্দটি ছিলো ‘ছবিয়াল’, অন্যটি ‘ভাইব্রাদার’।
আমার বন্ধুদের অনেকেই এখন ব্যাংকার, ডাক্তার, উকিল কিন্তু দুর্দান্ত চলচ্চিত্র সমালোচক (খাওয়ার টেবিলে বউ-বাচ্চার সাথে); বা ফুলটাইম মুভিগোজার। আমাদের শুরু হয়েছিল কিন্তু ছবিয়াল থেকে। আমরা যে কোনো আড্ডায় ছবিয়াল নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছিলাম।
সারা দুনিয়ার যে কোনো সিনেমার পর্দার পেছনের মানুষকে চিনতে ও জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম। অ্যাক্টর, যাদেরকে দেখা যায় সামনে; তাঁদেরকে ছাপিয়ে আমরা কৌতুহলী হয়ে উঠেছিলাম কার সিনেমা, কে বানিয়েছে, তার রাজনৈতিক-সামাজিক প্রেক্ষাপট।
‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’ দেখার পর, দুই বাক্যে আমার ভাবনা– এটা বাংলাদেশি তৈরি সুন্দরতম মার্ডার মিস্ট্রি, আর এমন নিপুণ এক সাসপেন্স থ্রিলার যেমনটা এখানে আগে দেখা যায়নি। যেটাতে ‘বিদেশি থেকে অনুপ্রাণিত’-র ঘ্রাণ নেই। এ বঙ্গের, এখানকার যাপনের দাগ আছে ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’ এর গায়ে।
অনেকদিন পর একটি যোগ্য চরিত্রে, ঠিকঠাক অভিনয়টা করার যথেষ্ঠ সুযোগ দিয়ে, সত্যিকারের অভিনেতা আফজাল হোসেনকে আবারও আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ফারুকীকে ধন্যবাদ।
‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’- এর গল্পটা মধ্যবিত্তের জীবন থেকে নেওয়া। তাসনিয়া ফারিণ যিনি মুল গল্পে মামুনুর রশীদের মেয়ে, সারাজীবন চাকুরি করা অসুস্থ বাবাকে শেষ বয়সে সেইভ করা ও করতে চাওয়ার যে গল্প; তা অভিজ্ঞতা দিয়ে উপলদ্ধি না করলে কেউ লিখতে পারে বা ভাবতে পারে বলে আমি অন্তত মনে করি না। এত কথার কারণ একটাই- যেটুকু চরিত্র যতটুকু জায়গা দিয়ে বুনলে গল্প জীবনকে যতভাবে কানেক্ট করে, গল্প সেভাবে লেখা, ভাবা ও দেখানো।
মোস্তফা মনোয়ারের ক্ষেত্রে বলতে হয় দুটোই– একটি চরিত্র যোগ্য অভিনেতা পেয়েছে এবং একজন অভিনেতা যোগ্য চরিত্র পেয়েছেন।
দৃশ্যায়ন, নির্মাতার অতীতে দেখা যেকোন কাজের থেকে বেশি ভালো লেগেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক কানে আরাম দেবে।
‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’ দেশের ওটিটিতে রিলিজ হওয়া আমার এখনও অব্দি দেখা সবচেয়ে সুন্দর সিরিজ। মিস করলে আপনি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্দান্ত অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে সবচেয়ে দুর্দান্ত নির্মাতাদলের মিশেলে যে সিনেম্যাটিক বিউটি তৈরি হয়েছে– তা দেখা থেকে বঞ্চিত থাকবেন।