আগে থেকেই নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন হলের মালিকেরা। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন হলগুলো বন্ধ। সরকার থেকে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণের চেয়ে অনুদানের কথাই ভাবছেন হলের মালিকেরা।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সারা দেশে সিনেমা হল ছিল ১ হাজার ৪৩৫টি। গত দুই দশকে কমতে কমতে তা ২০০-এর নিচে নেমে এসেছে। এই শিল্পে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যাও ব্যাপকভাবে কমছে। প্রদর্শক সমিতির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, মাত্র ১০ বছর আগেও সারা দেশের সিনেমা হলগুলোর সঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সম্পৃক্ত ছিল। এখন তা নেমে এসেছে ৫ হাজারের নিচে। হলমালিকেরা বলছেন, চার দশকের এই চিত্রই বলে দেয় এভাবে চললে ১০ বছর পর দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোর জায়গা হবে ইতিহাসের পাতায়।
হলমালিকদের ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ঋণ নিয়ে কী করবে যদি হলে ছবি না থাকে–এমন প্রশ্ন উঠেছে হলমালিকদের মনে। হলমালিক বা প্রদর্শক সমিতির বর্তমান সভাপতি কাজী শোয়েব রশিদ বলছেন, ‘করোনার কারণে অনেক হলমালিক সচ্ছলতা হারিয়েছেন, এখন আর ঋণের বোঝা নিতে চাইছেন না। ৫ শতাংশ সুদ দেওয়া অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। আমরা এটাকে ২ শতাংশ সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তা ছাড়া গত রোজার ঈদে হল খুলেছিলাম; কিন্তু কোনো ছবি মুক্তি দেওয়া হলো না। তাহলে ঋণ নিয়ে কী করব! আমাদের এখন অনুদান দরকার। সরকারি সহযোগিতা আর পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া হলগুলো টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।’
শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হলমালিকেরা যখন লাইসেন্স নিয়েছিলেন, লিজ নিয়েছিলেন। তখন শর্ত ছিল শুধু সিনেমা হল থাকবে। এখন ওখানে মার্কেট করছেন। এটা ঠিক না। সরকার ঋণ দিচ্ছে, প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। খুবই অল্প সুদে ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু হলমালিকেরা হাত গুটিয়ে বসে থাকলে আমরা প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে ধুয়ে–মুছে সময়োপযোগী করব? আমাদের অনেক ছবি প্রস্তুত আছে। কিন্তু প্রদর্শনের জায়গা নেই। তাঁরা যে বিদেশি ছবি চালানোর পাঁয়তারা করছেন, সেটা হতে পারে না।’
দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম কুড়াচ্ছে অনেকের ছবি। অথচ হলের অভাবে ব্যবসায়িক সাফল্য মিলছে না দেশে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুতই সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান, সঠিক দিকনির্দেশনা আর সহযোগিতা আশা করছেন হলমালিকেরা।