হোম > অর্থনীতি > বিশ্ববাণিজ্য

ভারত রেকর্ড প্রবৃদ্ধি দেখালেও ৬ মাসে রপ্তানিতে ধস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

মার্কিন শুল্কের ধাক্কায় রপ্তানি বাণিজ্যে কঠিন বাস্তবতায় মুখোমুখি হতে হয়েছে ভারতকে। ছবি: ইনভেস্ট ইন্ডিয়া

ভারতের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল রেকর্ড উচ্চতায়। রয়টার্সের এক জরিপে অর্থনীতিবিদেরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, ভারতে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। কিন্তু এর পরপরই মার্কিন শুল্কের ধাক্কায় কঠিন বাস্তবতায় মুখোমুখি হতে হয়েছে দেশটিকে।

দক্ষিণ এশিয়ার এই অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশটির সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপে মোট মার্কিন শুল্কহার দাঁড়ায় ৫০ শতাংশ। আর এই শুল্ক ভারতের রপ্তানিমুখী অর্থনীতির পতন যেন অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে।

যদিও ভারত বলছে, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ বেড়েছে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৭.৮ শতাংশ। তবে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত মে থেকে অক্টোবরের মধ্যে ভারতের মার্কিন রপ্তানি ২৮.৫ শতাংশ কমেছে। এতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ওয়াশিংটনের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন খাতের পাশাপাশি, যেসব খাতকে নামমাত্র অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর রপ্তানি বাণিজ্যেও তেমন অগ্রগতি হয়নি।

ভারতের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮.৮ বিলিয়ন ডলার। সেই থেকে অক্টোবরে রপ্তানির মূল্য কমে ৬.৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়া থেকে ক্রুড অয়েল কেনার ‘শাস্তি’ হিসেবে মার্কিন প্রশাসনের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হওয়ার পর এ পতন ত্বরান্বিত হতে থাকে। এ শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য নয়াদিল্লি জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মোদী সরকার আশা করছে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ এ নিয়ে সীমিত আকারের চুক্তি হতে পারে, যদিও অতীতের প্রত্যাশাগুলো বাস্তবে রূপ নেয়নি। এদিকে গত শুক্রবার বাণিজ্য সচিব দাবি করেন, ভারতের অক্টোবরে রেকর্ড ৪১.৬৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি এখনো ‘উদ্বেগের’ বিষয় নয়।

ট্রেড ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) পরিচালিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, শুল্ক বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে শ্রমনির্ভর খাতগুলোর ওপর। গত ২ এপ্রিল শুল্ক ১০ শতাংশে উঠেছিল, ৭ আগস্ট তা বেড়ে ২৫ শতাংশে পৌঁছায় এবং আগস্টের শেষদিকে হঠাৎ করেই ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়।

বর্তমানে ভারতের মোট মার্কিন রপ্তানির ৫২ শতাংশই ৫০ শতাংশ শুল্কের আওতায়, যা বিশ্বের সর্বোচ্চগুলোর মধ্যে একটি।

গতকাল শনিবার প্রকাশিত জিটিআরআই–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতের রপ্তানি ৩২ শতাংশ কমেছে, ৯৪৪ মিলিয়ন ডলার থেকে নেমেছে ৬৪৩ মিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে শুধু গার্মেন্টস রপ্তানিই কমে গেছে ৪০ শতাংশ। যা টাকার অঙ্কে ৫১৫.৪ মিলিয়ন ডলার থেকে নেমে ৩০৬.১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

রত্ন ও গয়না রপ্তানি ২৭ শতাংশ কমে ৫০০.২ মিলিয়ন ডলার থেকে নেমে হয়েছে ৩৬৩.৮ মিলিয়ন ডলার। ঐতিহ্যবাহী হীরা রপ্তানি ২৯ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১৯৩.৫ মিলিয়ন ডলার থেকে নেমে ১৩৮.১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। শুধু ল্যাব-গ্রোন জুয়েলারি বা ল্যাবে প্রস্তুত গয়নার রপ্তানি সামান্য বেড়েছে।

সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানি ৩৯ শতাংশ কমে ২২৩ মিলিয়ন ডলার থেকে নেমে ১৩৬.৯ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের চিংড়ি আমদানিকারীরা ভারত থেকে সরে ইকুয়েডর ও ভিয়েতনামের দিকে ঝুঁকেছেন, যার ফলে এই পতন আরও তীব্র হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের সবচেয়ে বড় একক রপ্তানি পণ্যলাইন স্মার্টফোন। এ খাতেও রপ্তানি ৩৬ শতাংশ কমেছে। মে মাসের ২.২৯ বিলিয়ন ডলার থেকে অক্টোবরে নেমে ১.৫০ বিলিয়ন ডলারে এসেছে। এতে প্রায় ৭৯০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে।

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে বিমানযোগে বিপুল পরিমাণ স্মার্টফোন পাঠিয়ে দিয়ে এ শুল্ক ধাক্কা থেকে নিজেদের কিছুটা রক্ষা করতে পেরেছে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকারকদের মধ্যে অন্যতম কোম্পানি অ্যাপল। কোম্পানিটি মে মাসের আগেই অনেক বেশি পণ্য রপ্তানি করে দেয়।

এদিকে ভারতের অন্যতম রপ্তানি পণ্য ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে এর ধাক্কা তেমন বেশি ছিল না। এ খাতের রপ্তানি তুলনামূলকভাবে বেশ স্থিতিশীল ছিল। মাত্র ১.৬ শতাংশ কমে ৭৪৫.৬ মিলিয়ন ডলার থেকে নেমে ৭৩৩.৬ মিলিয়ন ডলারে এসেছে।

ট্রেড ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি জিটিআরআই–এর প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, ভারতকে ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ দিতে হবে। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই বলেছেন ভারত রাশিয়ান তেল আমদানি ‘খুব উল্লেখযোগ্যভাবে’ কমিয়েছে।

কিন্তু ভারতের এ বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি দাবি করেন, মার্চে ঘোষিত এবং ১২ নভেম্বর মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়া রপ্তানি প্রমোশন মিশন এখনো কাগজেই রয়ে গেছে। অর্থবছরের আট মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো প্রকল্প কার্যকর হয়নি, ফলে লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তেলের গাড়ি বিদেশে পাঠিয়ে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি বাড়াচ্ছে চীন

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের ২০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

টিসিবির নতুন ৫ পণ্যের বিতরণ পেছাল

ট্যানারি শ্রমিকেরা মৌলিক শ্রম অধিকার থেকে বঞ্চিত: সমীক্ষা

অ্যামাজন–ফ্লিপকার্টের নতুন ঋণসেবা, ভারতের ব্যাংকগুলোর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ

মুখ ফিরিয়েছে বাংলাদেশ, পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা

চাপের মুখে নতি স্বীকার ভারতের, রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করল রিলায়েন্স

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলপিজি আমদানির চুক্তি করল ভারত

চা, কফি ও গরুর মাংসসহ শতাধিক খাদ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার ট্রাম্পের

নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পর ভারতের দিকে মুখ তুলে চাইল কানাডা