‘বাবা কালকা থাকি মুই কী নিয়া স্কুল যাইম, সব বই যে পুড়ি গেইল? বড় আপা যে কয় দিন আগোত নতুন বই কিনি আনিল, সেই বইগুলাও তো পুড়ি গেইল, বড় আপা কী নিয়া স্কুল যাইবে।’ পুড়ে যাওয়া বই হাতে নিয়ে বাবার কাছে এভাবেই বলছিলেন দিনমজুর আদম আলীর ছোট মেয়ে মারুফা আক্তার।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় উপজেলার পূর্ব মহিপুর গ্রামের হাবিবুরের বাড়িতে আগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে আগুনে পুড়ে ছাই হয় গেছে ছয় পরিবারের বাড়ি। এতে আটটি ঘর, একটি গরু এবং ব্যবহৃত কাপড়সহ ঘরে থাকা সব মালামাল পুড়ে গেছে।
ভুক্তভোগী পরিবার গুলো হলো ওই গ্রামের মৃত মন্জুম আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৩২), হাবিবুর রহমান (৪০), মাসুদার রহমান (৫৫) ও মন্জুম আলীর স্ত্রী উম্মেহানির বাড়ি ও পাশে থাকা আদম আলী (৩৫) ও তাঁর মা হাজেরা বেগম (৬০)। মৃত মন্জুম আলীর ছেলেরা রংপুর নগরীতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং তাঁর স্ত্রী মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অন্যদিকে আদম আলী ও তাঁর মা মানুষের জমিতে কাজ করে পরিবার চালান।
আজ সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া গরুর পাশে বসে হাউমাউ করে কাঁদছেন হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আরজীনা বেগম। এ সময় তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজকের পত্রিকার বলেন, ‘খায়া না খায়া অনেক কষ্ট করি বাবুর বাপসহ কিছু টাকা জমা করি একটা গরু কিনছিলুম। ১৫ দিন আগে আরও একটা গরু কেনার জন্য কিস্তির উপর ৪০ হাজার টাকা তুলছি। গরু কেনার জন্য কয়েকটা গরুর হাটও ঘুরছে বাবুর বাপ (স্বামী)। কিন্তু ৪০ হাজার টাকায় ভালো গরু পাওয়া যাচ্ছে না। আমি একটা বিমা অফিসে কিস্তি তোলার কাজ করি। শনিবার বিমা অফিস বন্ধ থাকায় কিস্তির ৩০ হাজার টাকা ও বই ঘরে ছিল সেগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি এখন এসব কীভাবে শোধ করব? এখন শুধু পরনের কাপড়টুকু ছাড়া যে আর কিছুই নাই। কীভাবে এসব টাকা পরিশোধ করব কিছুই বুঝে উঠতে পাচ্ছি না।’
তাদের অভাবের সংসার হওয়ায় মিথী আক্তারের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। এ সময় করুণ কণ্ঠে বাবা আদম আলী বলেন, ‘বাবা মোর সব কিছু শ্যাষ হয়া গেইছে। মোর আর কিছু থাকিল না।’
এ সময় পুড়ে যাওয়া অন্য পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ইচ্ছা করলেও কিছু বলতে পারছেন না। সবকিছু হারিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে গেছেন তাঁরা।
এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের তালিকা করে জেলা প্রসাশকের কার্যালয় পাঠানো হবে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি তাদের পুনর্বাসনের জন্য সেখান থেকে সহায়তা পাবে।’