রংপুর শহরের প্রাণখ্যাত শ্যামাসুন্দরী খাল দখল, দূষণ ও তলদেশ ভরাটের কারণে এখন নগরবাসীর দুঃখ হয়ে উঠেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য খালের ১০ কিলোমিটার অংশ খনন (ড্রেজিং) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রংপুর নগরীর শ্যামাসুন্দরী খাল পরিদর্শন শেষে রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘খালটির পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ১০ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি ৬৮টি বর্জ্য প্রবেশ পয়েন্টে ছাঁকনি বসানো হবে। এতে খালে দূষণ কমবে এবং বর্ষাকালে পানির প্রবাহ ফিরে আসবে।’
খালের প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘শ্যামাসুন্দরী খালের দুটি স্থানে কৃত্রিম বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধগুলোর যৌক্তিকতা খুঁজে দেখা হবে এবং প্রয়োজন হলে সেগুলো অপসারণে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে শুষ্ক মৌসুমেই কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘যেসব পয়েন্ট দিয়ে খালে বর্জ্য প্রবেশ করছে, সেগুলোর অপসারণ জরুরি। তবে সেই বর্জ্যগুলো কোথায় যাবে, তা নিয়ে স্বল্প ব্যয়ে বর্জ্য শোধনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তা-ও আমরা বিবেচনা করছি।’
খাল উন্নয়নের পাশাপাশি উপদেষ্টা তিস্তা নদী পুনর্গঠন ও ভাঙনরোধে নেওয়া কর্মসূচির অগ্রগতির কথাও জানান। তিনি বলেন, ‘তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবন ও জমি রক্ষায় আমরা কাজ করছি। মাত্র দুই মাসেই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেয়ে ১৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকা সংস্কার করা হয়েছে। বাকি অংশে কাজ শুষ্ক মৌসুমে করা হবে।’
তিস্তার স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, পারমানেন্ট বাঁধ তৈরির দাবি থাকলেও রিসোর্স পারসনের সংকটে তা এখনই সম্ভব নয়। রংপুর ছাড়াও শরীয়তপুর, ফরিদপুর, ফেনি—সব জেলাতেই এ দাবি রয়েছে। এত স্বল্প সময়ে সব জায়গায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।
উত্তরাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে সময় স্বল্পতার কথা জানিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সময়ের দায়িত্বে আছি। পাঁচ বছরের মেয়াদি সরকার হলে বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যেত। তারপরও রংপুরে একটি হাসপাতাল ও তিস্তা নদী নিয়ে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য, যত দিন স্থায়ী সমাধান না হয়, তত দিন যেন এই অঞ্চলের মানুষ বারবার বন্যা, নদীভাঙন বা সেচসংকটে না পড়ে, সে জন্য প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
এর আগে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কুড়িগ্রাম ও কাউনিয়ার তিস্তার তীরবর্তী অঞ্চল ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।