ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে গত কয়েক বছরে ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর এ ঘাটতি কমাতে তেলজাতীয় ফসলের আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে করে উত্তরের জেলা দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফলে গত পাঁচ বছরে ধান, গম, ভুট্টা, আলুর পাশাপাশি সরিষার আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। এ চাহিদা পূরণে সরকার দেশে তেলজাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। গত ৩ বছরে এই প্রকল্পের অধীনে কৃষি বিভাগের কর্মতৎপরতায় আশাতীত ফলাফল পাওয়া গেছে।
এই প্রকল্পের অধীনে প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তে কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করে অধিক ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। বিশেষ করে সরিষা, তিল, সূর্যমুখী, চীনা বাদাম, সয়াবিন উৎপাদন বৃদ্ধিসহ কৃষকের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন করাও প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য।
প্রকল্পের আওতায় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়ের ১০ উপজেলা প্রকল্পের আওতাভুক্ত করে কাজ শুরু করা হলেও ইতিমধ্যে ভালো ফলন ও আশানুরূপ দাম পাওয়ায় ৩ জেলার সব উপজেলাতেই ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন ধান তোলার পর অনেক জমি পরবর্তী বোরো ধান রোপণের আগ পর্যন্ত অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকত। কিন্তু বর্তমানে কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকেরা মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন।
তারা জানান, সরিষা তোলার পর অনায়াসে বোরো ধান রোপণ করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা আবাদের কারণে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিকর রোগ-বালাই দমনেও সহায়ক হচ্ছে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক শাহিনুর আলম আজকের পত্রিকাকে জানান, তিনি চলতি বছরে ৩ একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। ফলনও মোটামুটি ভালো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আগে নিজের প্রয়োজনে সামান্য সরিষা আবাদ করে আলু আবাদ করতেন। কিন্তু বর্তমানে সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় এবং সরিষায় তেমন খরচ না থাকায় সরিষার আবাদ বাড়িয়েছেন। সেই সঙ্গে সরিষা আবাদ করলে পরবর্তী ফসলে সার কম খরচ হয়। ফলে ফসলের উৎপাদন খরচ কমে।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক রিয়াজুল ইসলাম জানান, আগে এই সময়ে তার জমি পড়ে থাকত। কিন্তু এখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি গত ৩ বছর ধরে সরিষার আবাদ করছেন। এতে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের দিনাজপুর অঞ্চলের উপপরিচালক এসএম গোলাম সারওয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলে আমন আবাদের পর বোরো রোপণের আগ পর্যন্ত জমিগুলো অনাবাদি পড়ে থাকে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই অঞ্চলের জমিগুলোকে চাষের আওতায় এনে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে তেলের ঘাটতি পূরণ ও বৈদেশিক নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
গত ৩ বছরে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়ার কথা উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘কৃষকেরা সরিষার আবাদের মাধ্যমে একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি বৈদেশিক নির্ভরতা কমছে আবার সরিষা আবাদের কারণে পরবর্তী ফসলে সারের খরচও কমছে। জমির উর্বরতাও বাড়ছে।’