নতুন সমীক্ষা বা আর কোনো টেকনিক্যাল টিম নয়; কালক্ষেপণ না করে নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে হবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা। এমন দাবিতে মাঝ নদীতে ভিন্নধর্মী মঞ্চ বানিয়ে আন্দোলন করেছে তিস্তাপারের হাজারো মানুষ।
আজ শনিবার বিকেলে ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের’ আয়োজনে তিস্তা রেলসেতু এলাকায় এ আন্দোলন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধা, কাউনিয়াসহ তিস্তাবেষ্টিত বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নৌকা, গাড়ি ও পায়ে হেঁটে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডসহ তিস্তা রেল সেতু এলাকায় এসে সমাবেশে যোগ দেন। পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে বিজ্ঞান সম্মতভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’ নেতারা।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশের উদ্বোধন করেন পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
এ সময় রসিক মেয়র মোস্তফা বলেন, ‘দুই দফায় ভারত সফর শেষে চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফর শেষে আর আশ্বাস নয় দীর্ঘসূত্রতার অবসান করবে বঙ্গকন্যা। এ ছাড়া ভারত-চীনের দৌরাত্ম্যে নিরসনে তিস্তাপাড়ের দুই কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় মহাপরিকল্পনার কাজ সফর শেষ করে এসে শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী— এমন প্রত্যাশা আমরা রাখি। ভারত-চীন কেউ অর্থায়ন না করলে পদ্মা সেতুর মতো নিজের টাকায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানাই।’
সমাবেশে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, ‘রাক্ষসী তিস্তা উত্তরের পাঁচ জেলার প্রায় দুই কোটি মানুষের জীবনরেখার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে চলেছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙনে এই নদী গিলে খায় কৃষকের হাজারো একর ফসলি জমি, বসতভিটা। যার বাৎসরিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এর থেকে বাঁচতে দশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি তিস্তাপাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের। তাই সমীক্ষার নামে আর কাল ক্ষেপণ নয় চীন-ভারতের দ্বৈরথ নিরসন করে নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মতভাবে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলতি বছরেই শুরু করার দাবি করছি।’
সমাবেশে নেতারা আরও বলেন, গত বছরের ২ আগস্ট রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ওই দিন বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছিল, আমাদের তিস্তা মহাপরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করব। শুধু তাই নয়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে লালমনিরহাটের কালেক্টরেট মাঠের ভার্চুয়াল সভায় যুক্ত হয়েও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিষয়ে একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তিস্তাপাড়ের কোটি মানুষকে তিস্তা মহাপরিকল্পনার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আমরা চাই অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্বপ্নের তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও তিস্তার বুকে ব্যাপক খনন করা হোক।