কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন এক রোগীর শার্টের কলার চেপে ধরে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ওই রোগী তাঁর পাশের অপরিচ্ছন্ন বেড আগে পরিষ্কার করার আবেদন জানিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই রোগীর ভর্তি বাতিল করা হলে তিনি হাসপাতাল ছেড়ে যান।
এ ঘটনায় ওই চিকিৎসকের বিচার দাবিতে রোগীর স্বজনেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বিক্ষোভ করেছেন। আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে।
তবে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বরাতে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, বাদানুবাদ হলেও রোগীকে ধাক্কা দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
হাসপাতাল ও রোগী সূত্রে জানা গেছে, ইসরাইল হোসেন নামের এক রোগী আন্তবিভাগে ভর্তি ছিলেন। তিনি পাশের বেডের অপরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধযুক্ত বিছানার স্থান পরিষ্কারের বিষয়ে ওই বিভাগে রাউন্ড দিতে আসা চিকিৎসকের কাছে দাবি জানান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক বায়োজিদ হাসান বাঁধনের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে এ কাণ্ড ঘটান।
এ নিয়ে ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনেরা বিক্ষোভ শেষে ওই চিকিৎসককে বরখাস্ত ও শাস্তির দাবিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিয়েছেন।
রোগী ইসরাইল হোসেন জানান, টাইফয়েড ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আন্তবিভাগে ভর্তি হন তিনি। আজ শুক্রবার সকালে তাঁর পাশের বিছানায় এক রোগী ভর্তি হন। একপর্যায়ে ওই রোগী বিছানায় পায়খানা করলে পুরো ওয়ার্ডে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই চিকিৎসক রাউন্ড দিতে এলে সঙ্গে সঙ্গেই ঝাড়ুদার এসে বারান্দা ঝাড়ু দিতে থাকেন।
ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘দুর্গন্ধের বিষয়ে চিকিৎসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আগে পাশের বিছানা পরিষ্কারের আবেদন জানাই। এ সময় চিকিৎসক বলেন, ‘‘তুমি যা বলবে তাই শুনতে হবে?”। উত্তরে আমি বলি, ‘‘তাহলে আপনাকে বলে লাভ কি। আপনিও মনে হয় কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন।”’
এই কথা শোনা মাত্র চিকিৎসক রাগান্বিত হয়ে ওই তাঁর শার্টের কলার চেপে ধরে জোরে ধাক্কা মারেন। নার্সকে দিয়ে দ্রুত তাঁর ভর্তি ফাইল নিয়ে এসে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ভর্তি বাতিল করেন। একপর্যায়ে তাঁকে হাসপাতাল থেকে বের হতে ধমক দেন। পরে রোগী হাসপাতাল ছেড়ে গেলে ঘটনা জানাজানি হয়।
এই বিষয়ে চিকিৎসক বায়োজিদ হাসান বাঁধনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।
ফুলবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হক বলেন, ‘ঘটনাস্থলে এসে আমরা পরিস্থিতি শান্ত করি। এরপর ওই রোগী এবং চিকিৎসকের জবানবন্দি গ্রহণ করেছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. সুমন কান্তি সাহা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংঘটিত ঘটনা ও রোগীর অভিযোগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন মঞ্জুর-এ-মোর্শেদ বলেন, তিনি ঘটনা জেনেছেন। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।