শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এর আগে সকাল থেকে বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীরা, ‘চাটুকারের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আইন বিভাগের বারান্দায়, চাটুকারের ঠাঁই নেই’, ‘নিপীড়ক বাইরে কেন? প্রশাসনের জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট রাবি শিক্ষার্থীদের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগরকে ধর্ষক সম্বোধন করে একটি পোস্ট করা হয়। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন ২৭ আগস্ট আইন বিভাগের জরুরি একাডেমিক কমিটির সভা শেষে সভাপতি অধ্যাপক সাঈদা আঞ্জুর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১০ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেলেও ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রতিবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলে পাঠানো হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে সেলটি অকার্যকর থাকায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওযা হয়নি।
বিক্ষোভের বিষয়ে আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা ঢালী বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগ থেকে একটি সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের কাছে রিপোর্ট দিয়েছে। সেই রিপোর্টে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। কিন্তু সিন্ডিকেটে সেটি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ সেলে পাঠানো হয়েছে। যেটি দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। সিন্ডিকেট জেনে-বুঝে অকার্যকর একটি সেলে প্রতিবেদন পাঠানোর প্রতিবাদ এবং অনতিবিলম্বে ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আমরা বিক্ষোভ করেছি।’
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘তদন্তে অভিযোগের চূড়ান্ত সত্যতা আমরা পেয়েছি। ফলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিন্ডিকেটের কাছে সুপারিশ করেছি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মিলেছে। তাই সেটি যৌন নিপীড়ন সেলে পাঠানো হয়েছে। তবে সেলটির সদস্যরা না থাকায় এখনো পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। আমরা খুব দ্রুতই যৌন নিপীড়ন সেলের নতুন কমিটি গঠন করব। নতুন কমিটি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’