বহুদিন ধরেই উন্নয়নবঞ্চিত হয়ে থাকার অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন যমুনার পশ্চিম পারের মানুষ। যারাই ক্ষমতায় থাকুক, উত্তরাঞ্চল উন্নয়নবঞ্চিত থেকেছে বলে অভিযোগ করে এসেছেন তাঁরা। তবে বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে বিগত ১৪ বছরে সেই আক্ষেপ অনেকটাই মিটেছে। দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলও।
বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে রাজশাহীর প্রতিটি জেলাতেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বিভাগীয় শহর রাজশাহী পরিণত হয়েছে সাজানো-গোছানো এক দৃষ্টিনন্দন নগরীতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন দেওয়া প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজশাহী হয়ে উঠছে দেশের সেরা শহর। রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে এর বাইরেও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
শিক্ষানগরী রাজশাহীতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক। এখানে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দও শুরু হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করতে ঢাকার বাইরে রাজশাহীতেই দ্বিতীয় নভোথিয়েটার নির্মাণ করা হচ্ছে। এর কাজও প্রায় শেষ। শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য করা হচ্ছে বিসিক-২ শিল্পাঞ্চল। নির্মিত হয়েছে শিশু হাসপাতাল। চলছে ক্যানসার সেন্টারের নির্মাণকাজও।
উত্তরাঞ্চলের প্রথম ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে রাজশাহীতে। শহরের সরু সড়কগুলোকে সম্প্রসারণ করে চার লেন পর্যন্ত করা হয়েছে। সড়কগুলোর মাঝে দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি বসিয়েছেন সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। নতুন নতুন সড়ক আর সড়কবাতি দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন নগরবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত শুধু রাজশাহী সিটি করপোরেশনই ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এখনো চলছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের ভেতরেই রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলছে বাস্তবায়ন। এরই মধ্যে রাসিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন করেছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত হয়েছে বড় বড় নালা।
রাজশাহীতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে গণপূর্ত বিভাগ-১ গত ১৪ বছরে বাস্তবায়ন করেছে ২৬৩ কোটি টাকার প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, এনএসআই কার্যালয়, রাজশাহী নগর পুলিশের নতুন প্রধান কার্যালয়, মডেল মসজিদ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন ইত্যাদি।
গণপূর্ত বিভাগ-২ রাজশাহীতে বাস্তবায়ন করেছে ২৬৮ কোটি ১১ লাখ টাকার প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সম্প্রসারণ, শিশু হাসপাতাল নির্মাণ, বিভিন্ন ফায়ার স্টেশনসহ অন্য সরকারি দপ্তরের ভবন।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাজশাহীতে বাস্তবায়ন করেছে ৮৬ কোটি টাকার প্রকল্প। গত ১৪ বছরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) পোড়ামাটিতে ফসল ফলাতে বাস্তবায়ন করেছে ২ হাজার ৯৫০ কোটি ১৮ লাখ টাকার বেশি প্রকল্প। এর ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের একফসলি জমিতে এখন তিনটি ফসল ফলছে।
জনস্বাস্থ্যের জন্য ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পদ্মার ভাঙন থেকে রাজশাহীকে রক্ষায় রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাস্তবায়ন করেছে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৭৬ হাজার টাকার বিভিন্ন প্রকল্প। মহানগরীর বিভিন্ন উন্নয়নে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) ১৪ বছরে হাতে পেয়েছে ৫১৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার প্রকল্প। এতে হয়েছে সড়কের উন্নয়ন। গড়া হয়েছে নতুন আবাসিক এলাকা।
নারীদের উন্নয়নে গত ১৪ বছরে রাজশাহী মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর পেয়েছে ১৯ কোটি ৭০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। নারীদের নানা রকম প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করেছে সরকারের এ উদ্যোগ। রাজশাহী ওয়াসাকে ১৪ বছরে সরকার দিয়েছে ১৪৭ কোটি ৭২ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
এ ছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ৬ কোটি ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৭৪ কোটি ৭৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ব্যয় করেছে।
এই ১৪ বছরে শুধু রাজশাহী জেলা ও মহানগরে ১০ হাজার ৬৫৯ কোটি ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এতে সবদিক থেকেই এগিয়ে গেছে রাজশাহী। আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প এখন চলমান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল রোববার রাজশাহী আসছেন। ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তিন মেয়াদে উন্নয়নের মাধ্যমে রাজশাহীকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হবে। জনসভায় যোগ দেবে পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ বছর আগেও একবার রাজশাহী এসেছিলেন। কিন্তু এবার তাঁর আসাটা একটু অন্য রকম। কারণ, তিনি রাজশাহীবাসীকে দুই হাত ভরে দিয়েছেন। রাজশাহীর উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। জনসভা থেকেও তিনি ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। তিনি রাজশাহীকে নিয়ে তাঁর আগামী দিনের পরিকল্পনাও জানাবেন।’