ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দুই গ্রামের দ্বন্দ্বের জেরে ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে স্থানীয় একটি বাজারের অন্তত ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অনেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে পড়েছেন বিপাকে।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বন্যাগাড়ি গ্রামের ভুক্তভোগী ২০ জন ব্যবসায়ী এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এখনো সুরাহা পাননি তাঁরা।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, আটলংকা বাজারের পাশে চিকনাই নদের ধারে অবস্থিত ঈদগাহ মাঠ নিয়ে বন্যাগাড়ি ও আটলংকা গ্রামের মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। এ নিয়ে ২ অক্টোবর দুই গ্রামবাসী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তাতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। ওই ঘটনার পর থেকে দুই গ্রামবাসীর দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। আটলংকা বাজারে রয়েছে বন্যাগাড়ি গ্রামের অনেকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সংঘর্ষের ঘটনার পর তাঁদের সেই সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
বন্যাগাড়ি গ্রামের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আটলংকা গ্রামের মানুষ তাঁদের বাজারে যেতে দিচ্ছে না। দোকানপাট খুলতে দিচ্ছে না। বন্যাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মামুন টেইলার্সের মালিক আল মামুন বলেন, ‘ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। তাই বলে আমরা বাজারে ব্যবসা করতে পারব না কেন। আমাদের দোকান খুলতে দিচ্ছে না আটলংকা গ্রামের মানুষ। ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে এখন কিস্তি শোধ করতে পারছি না। বিগত ১৫ দিন ধরে দোকান বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে খুব হতাশায় দিন কাটাচ্ছি।’
মুদিদোকানদার হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘১৫ দিন ধরে দোকান বন্ধ থাকায় আমার দোকানের মালপত্র নষ্ট হচ্ছে। এই ক্ষতি আমাকে কে পুষিয়ে দেবে। ব্যবসা করতে না পারলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। দোকান খুলতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে।’
রড, সিমেন্ট ও ঢেউটিন ব্যবসায়ী ফজলুল হক ও ওয়ার্কশপ মালিক রুবেল হোসেন বলেন, ‘অনেক টাকা ঋণ নিয়ে আমরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। এ সপ্তাহে আমাদের কিস্তি আছে। কীভাবে কিস্তি দেব, সেই চিন্তায় আমরা দিশেহারা। ব্যবসা করতে না পারায় আমরা পরিবার নিয়ে খুব দীনহীন অবস্থা পার করছি। অসুস্থ মানুষ, চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে পারছি না।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আটলংকা গ্রামের বাসিন্দা হারেস আলী বলেন, বন্যাগাড়ি গ্রামের মানুষ রাস্তা অবরোধ করে রাখছে। ওই রাস্তা দিয়ে আটলংকা গ্রামের কেউ গেলে তাঁকে হেনস্তা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম বলেন, ‘উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে আলোচনা করেছি। দুই পক্ষের ইতিবাচক মনোভাব পাওয়া গেছে। আটলংকা গ্রামের মানুষ বন্যাগাড়ি দিয়ে চলাচল করবে। আবার বন্যাগাড়ি গ্রামের মানুষও আটলংকা বাজারে যাবে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। আশা করছি, দু-এক দিনের মধ্যে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হবে।’