নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নে চার বছরের এক শিশুকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী শিশুটিকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তালা ভেঙে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত শনিবার রাতে কাশিপুর ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে শিশুটির বাবা সোহেল মিয়া। তাঁর বিরুদ্ধেই শিশুটিকে নির্যাতনের অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিশুটির বাবা সোহেল মাদকাসক্ত। দুই বছর আগে শিশুটির বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। এরপর মা প্রথমে শিশুটিকে তাঁর কাছে নিলেও সোহেল জোর করে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। এর পর থেকেই শিশুটিকে অনাহারে-অর্ধাহারে রাখতেন সোহেল। খেতে চাইলে বা কান্না করলে তাকে নির্মম নির্যাতন করতেন।
প্রতিবেশী নজরুল মিয়া বলেন, ‘বাচ্চাটাকে সারা দিন ঘরের ভেতর তালা দিয়ে রাখত। মাঝেমধ্যে দোকান থেকে চিপস, রুটি, জুস কিনে দিত সোহেল। মাদকে বুঁদ হয়ে এদিক-ওদিক পড়ে থাকত, বাচ্চার খোঁজ রাখত না। বাচ্চা ক্ষুধার যন্ত্রণায় ঘরে বসে কাঁদত। কয়েক দিন আগে এক মহিলা বাচ্চার এমন অবস্থা দেখে প্রতিবাদ করলে সোহেল তাকেও মারধর করে। দিনের পর দিন আমরা দেখতে দেখতে ঢাকার একটি সামাজিক সংগঠন “অপরিচিতা”র সঙ্গে পরামর্শ করি। তারা আমাদের থানায় বিষয়টি জানাতে বলে।’
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে জানতে পারি, এখানে একটি বাচ্চাকে তালাবদ্ধ ঘরে বন্দী রাখা হয় ও তাকে নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে তালা ভেঙে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে আজ সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে দেওয়া হয়েছে।’
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু সুরক্ষাকর্মী তাছলিমা আক্তার বলেন, শিশুটি অত্যন্ত অসুস্থ। প্রচণ্ড পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তার আরও চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা শেষে শিশুটিকে বয়স অনুযায়ী সরকারি ছোট মনি নিবাসে রাখা হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসলিমা নাসরিন বলেন, ‘ঘটনাটি জানতে পেরে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বর্তমানে শিশুটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের হেফাজতে আছে। তার চিকিৎসার ব্যয়সহ যাবতীয় ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করছি।’